Friday, November 22, 2024

ইতিহাস থেকে মুছে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী গোয়ালন্দ ঘাট রেল স্টেশনের নাম

মোজাম্মেল হক লালটু ,গোয়ালন্দ : পদ্মা মেঘনা যমুনার যৌবন জৌলুসের দিনে এক জীঘাংসু প্রকৃতির জলদস্যুর বিচরণ ছিল এই অঞ্চলে।পদ্মা মেঘনা যমুনায় ডাকাতি করে বেড়াতো গাঞ্জালিশ নামে এক জলদস্যু।যতদূর জানা যায় তার নামানুসারেই গাঞ্জলিশ থেকে কালক্রমে গোয়ালন্দ নামের উৎপত্তি হয়েছে। পদ্মা ও যমুনার মিলনস্থলে অবস্থিত অভ্যন্তরীণ নদী বন্দর হিসাবে তৎকালীন পরিচিত গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রেল লাইন উদ্বোধন করা হয় ১৮৭১ সালের ১ লা জানুয়ারি যা কুষ্টিয়ার জগতি থেকে গোয়ালন্দ ঘাট বা গাঞ্জালিশ ঘাট পর্যন্ত ছিল।বর্তমান ইতিহাস থেকে ঐতিহ্যবাহী রেলস্টেশনের নাম মুছে যেতে বসেছে।

সরজমিন ঘুরে জানা গেছে, ব্রিটিশ শাসন আমল থেকে ভারতবর্ষের সাথে রেল যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে ঘাট হিসেবে পরিচিত গোয়ালন্দ ঘাট রেলস্টেশন। তৎকালীন মুর্শিদাবাদ ও কলকাতার সঙ্গে ঢাকার যাতায়াতের একমাত্র স্টেশন ছিল গোয়ালন্দ ঘাট রেলস্টেশন। গোয়ালন্দ থেকে ভারতের রানাঘাট ও পশ্চিমবঙ্গের শিয়ালদহ পর্যন্ত সরাসরি ট্রেন চলত। ইলিশ মাছ সহ অন্যান্য পণ্য আমদানি রপ্তানি হতো এই রেল পথ দিয়েই। তবে লোকবল ও ট্রেন সংকট থাকায় ঐতিহ্যবাহী গোয়ালন্দ ঘাট রেলস্টেশন আজ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ১৮৮৪ সালে গোয়ালন্দ বাজার থেকে দৌলতদিয়া ঘাট পর্যন্ত রেলওয়ের পরিধি বাড়ানো হয়। যার ফলে দক্ষিণ ও উত্তর অঞ্চলের সঙ্গে রেল যোগাযোগের অন্যতম পথ হিসাবেই পরিচিত লাভ করেন গোলন্দঘাট রেল স্টেশন। সে সময় খুলনা থেকে আন্তঃনগর তিতুমীর এক্সপ্রেস ও লালন শাহ এক্সপ্রেস রাজশাহী থেকে আন্তঃনগর মধুমতি এক্সপ্রেস সৈয়দপুর থেকে পণ্যবাহী শিলিগুড়ি চুয়াডাঙ্গা দর্শনা থেকে নকশীকাঁথা মেইল পোড়াদহ থেকে সাটেল লোকাল চলাচল করতো এই রেল রুটে।

প্রথমে খুলনাগামী আন্তঃনগর তিতুমীর ও ২০২০ সালে রাজশাহীগামী মধুমতি এক্সপ্রেস প্রত্যাহার করে নিয়েছে রেল কতৃপক্ষ।পণ্যবাহী শিড়িগুড়ি ট্রেনটি দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ রয়েছে। সরাসরি খুলনা ও রাজশাহী যাতায়াতের কোন ট্রেন না থাকার চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এই রুটের যাত্রীদের। এই রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় কয়েক হাজার হোটেল ব্যবসায়ী ও বোর্ডিং ব্যবসায়ী সহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা বেকার হতে বসেছে।স্থানীয়দের দাবি পুনরায় এই রুটে ট্রেন বাড়ানো হোক।

গোয়ালন্দ ঘাট রেল স্টেশনে রাজশাহীগামী যাত্রী মর্জিনা বেগম ও তার স্বামী সিদ্দিকুর রহমানের সাথে আলাপকালে তারা জানান, গোয়ালন্দ ঘাট থেকে আগে ট্রেনে সরাসরি রাজশাহী যাতায়াত করতে পারতাম। রাজশাহী গামী ট্রেনটি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ট্রেনটি পুনরায় গোয়ালন্দ ঘাট টু রাজশাহী গামী চালু করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

গোয়ালন্দ ঘাট স্টেশন সংলগ্ন ইসলামিয়া হোটেল ব্যবসায়ী মোঃ সোহান বলেন, খুলনা ও রাজশাহী ট্রেন প্রত্যাহার করে নেওয়া পর এই রুটে যাতায়াতকারী যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে অন্যদিকে পণ্যবাহী ট্রেন না থাকায় ব্যবসায়ীদের সড়কপথে মালামাল আনতে খরচ কয়েক গুণ বেশি লাগছে। আবার
যদি নতুন করে নকশি কাঁথা মেইল ট্রেনটি প্রত্যাহার করে নেয় তাহলে গোয়ালন্দ ঘাটের অস্তিত্ব আর থাকবে না বেকার হবে হাজার হাজার ব্যবসায়ীরা ।

আরেক ব্যবসায়ী হোসেন মিয়া বলেন, মাওয়া জাজিরা পদ্মা সেতু হওয়াতে এমনিতেই গোয়ালন্দ দৌলতদিয়া ঘাট মরে গেছে।তারপরে যদি আবার নতুন করে নকশি কাঁথা মেইল ট্রেনটি প্রত্যাহার করে নেয় তাহলে তাহলে গোয়ালন্দ ঘাটের ঐতিহ্য হারিয়ে যাওয়া সহ বেকার হবে কয়েক হাজার লোক। গোয়ালন্দ ঘাট থেকে খুলনা রেলরুটে ৬১/৬২ ডাউন লোকাল ট্রেনটি বন্ধ হয়ে যায়। দর্শনা থেকে গোয়ালন্দ তিতুমীর ট্রেন নাম্বার ৬৭/৬৮ ডাউন বন্ধ হয়ে যায়। শিলিগুড়ি থেকে গোয়ালন্দঘাট ট্রেন নাম্বার ৭২৫/৭২৬ ডাউন বন্ধ হয়ে যায়। পার্বত্য পুর থেকে গোয়ালন্দ ঘাট ট্রেন নাম্বার ৫১২/ ৫১১ ডাউন বন্ধ হয়ে যায়।মধুমতি ট্রেন নাম্বার ৭৫৬/৭৫৫ এই পাঁচটি ট্রেন আমাদের গোয়ালন্দ ঘাটে নেই।তারপরও নকশি কাঁথা এক্সপ্রেস ২৫/২৬ ডাউন এখান থেকে যদি নিয়ে যায় তাহলে এই অঞ্চলের মানুষ সম্পূর্ণ বেকার হয়ে পড়বে। আমি জোর দাবি জানাচ্ছি আমাদের এই অঞ্চলে ট্রেন বাড়ানো হোক।

গোয়ালন্দ ঘাট স্টেশন মাস্টার জিল্লুর রহমান জানান, খুলনা আগামী তিতুমীর এক্সপ্রেস ও রাজশাহীগামী মধুমতি এক্সপ্রেস এখান থেকে প্রত্যাহার করে নিয়ে গেছে। এই রুটে কোন আন্তঃনগর ট্রেন নেই। নকশী কাঁথার মেইল ও সার্টের লোকাল ট্রেন পুরাদহ পর্যন্ত দুইবার যাতায়াত করছে। এখান থেকে নকশিকাঁথা মেইল ট্রেন প্রত্যাহার করা হবে। এরকম কোন চিঠি আমাদের অফিসে এখনো আসেনি। ‘

সর্বশেষ পোষ্ট

এই ধরনের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here