Sunday, December 22, 2024

বিষ খাইয়ে ছেলেকে হত্যার ঘটনায় সৎ মায়ের যাবজ্জীবন

রাজবাড়ী জার্নাল ডেস্ক:  বিষ খাইয়ে রিপন (৪) নামে সৎ ছেলেকে হত্যার দায়ে সৎ মা আকলিমা আক্তারকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত।

আকলিমা রাজবাড়ী সদর উপজেলার হাটবাড়ীয়া (শিবতলা) গ্রামের আক্কাস আলীর মেয়ে।
বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজবাড়ীর সিনিয়র দায়রা জজ মোসাম্মৎ জাকিয়া পারভিন এ রায় প্রদান করেন।

মামলার অভিযোগ ও আদালত সুত্রে জানাগেছে, ২০১০ সালের ১০ আগস্ট সকাল বেলা হযরত আলী ব্যবসায়িক গরু কেনার জন্য পাংশা থানার চর শাহমীরপুর এলাকায় যান। তার প্রথম স্ত্রী রেনু পারভীন গরুর ঘাস আনার জন্য মাঠে যায়। মেয়ে শিরিন আক্তার (৮) চর ঝিকড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণীর ছাত্রী। সেও সকালে স্কুলে গিয়েছিল।

বাড়ীতে তার দ্বিতীয় স্ত্রী আকলিমা আক্তার ও দুইটি শিশু সন্তান ছাড়া অন্য কেউ ছিল না। ওইদিন বেলা সাড়ে ১০ টার সময় বড় স্ত্রীর সাথে পারিবারিক ঝগড়া বিবাদের পূর্ব শত্রুতার কারণে প্রথম স্ত্রীর ছেলে রিপন (৪) কে হত্যা করার উদ্দেশ্যে ঘরে থাকা কীটনাশক বিষ বোতলের মুটকিতে করে তাকে খাওয়ায়ে দিলে সে তাৎক্ষনিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। চিৎকার দিয়ে কান্নাকাটি শুরু করে। ফলে পাড়ার অনেক লোকজন তার বাড়ীতে জড়ো হয়। ঘটনার আধা ঘন্টা পর তিনি বাড়ীতে এসে বাচ্চাকে কান্নাকাটি করতে দেখেন এবং অনেক লোকজন জড়ো হয়েছে দেখতে পান। তখন তার ছেলে রিপনকে কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে স্পষ্ট কিছু বলতে না পারলেও তার মুখ হতে বিষের গন্ধ বের হওয়ায় তিনি বুঝতে পারেন বিষক্রিয়ার কারণে সে কান্নাকাটি করছে। তখন তার সহোদর বড় ভাই আঃ রশিদ, তার স্ত্রী বানেছা ও তার চাচাতো ভাই সাইফুদ্দিন সহ তার অসুস্থ ছেলে রিপনকে চিকিৎসার জন্য রিক্সা ভ্যানযোগে পাংশা হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে পরীক্ষা করে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ভর্তি না করে তাৎক্ষনিক ভাবে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। তারা তাৎক্ষনিকভাবে একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে তার অসুস্থ্য ছেলে রিপনকে চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে ভর্তি করে দেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার ছেলে রিপন বিকাল ৩.৫০ টার সময় মৃত্যুবরণ করে। নিয়ম মোতাবেক ফরিদপুর কোতয়ালী থানা পুলিশ তার ছেলে রিপনের মৃতদেহের ময়না তদন্ত শেষ করে ২০১০ সালের ১১ আগস্ট বিকাল বেলা তার মৃতদেহ তাদের নিকট হস্তান্তর করে। তারা ওইদিন বিকাল সাড়ে ৫ টার সময় বাড়ীতে ফেরত আসে এবং মৃতদেহ দাফন করে। এরপর তার ছেলের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে তার দ্বিতীয় স্ত্রী আকলিমা আক্তারকে জিজ্ঞাসা করলে এক পর্যায়ে সে উপস্থিত তার প্রথম স্ত্রী রেনু পারভিন, ভাবী বানেছা বেগম, তার চাচাতো ভাই সুজন মল্লিক ও সাহাবুদ্দিনদের সামনে স্বেচ্ছায় স্বীকার করে যে, প্রথম স্ত্রীর সাথে ঝগড়া বিবাদ সংক্রান্ত পূর্ব শত্রুতার কারণে ও তাদের বাড়ীর সকলের অনুপস্থিতির সুযোগে সে হত্যার উদ্দেশ্যে তার শিশুপুত্র রিপনকে কীটনাশক বিষ খাইয়েছিল। এ সংবাদ এলাকায় জানাজানি হওয়ার পর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আ: আলীম সহ এলাকার অনেক লোকজন তাদের বাড়ীতে আসে এবং ঘটনা সম্পর্কে আকলিমা আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে স্বেচ্ছায় সকলের সামনে তার শিশুপুত্র রিপনকে হত্যার উদ্দেশ্যে কীটনাশক বিষ খাওয়ানোর কথা স্বীকার করে। জিজ্ঞাসাবাদ করে তার ছেলের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানার পর পাংশা থানায় এসে হযরত আলী এজাহার দায়ের করেন।

রাজবাড়ী জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর এ্যাড. উজির আলী শেখ বলেন, অভিযুক্ত আসামী আকলিমা আক্তারকে সৎ ছেলে রিপন (৪)কে বিষপান করে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং বিশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরো এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। এ রায়ে অপরাধ প্রবনতা সমাজ থেকে হ্রাস পাবে।’

 

সর্বশেষ পোষ্ট

এই ধরনের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here