Thursday, September 19, 2024

রাজবাড়ীতে পুলিশের বিক্ষোভ কর্মসুচী ও ১১ দফা দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান

স্টাফ রিপোর্টার: দেশব্যাপী বাংলাদেশ পুলিশের অধস্থন কর্মচারীদের উপর বর্বরোচিত হামলা, নৃশংস নির্যাতন ও হত্যার প্রতিবাদে পুলিশ বাহিনীর সংস্কার সহ রাজবাড়ী জেলা পুলিশের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ পুলিশ গঠনের জন্য ১১ দফা দাবী বাস্তবায়নে শুক্রবার (৯ আগস্ট) রাজবাড়ী পুলিশ লাইন্সে রাজবাড়ী জেলার অধস্থন পুলিশের আয়োজনে কর্মবিরতী কর্মসূচী পালিত হয়েছে। 

এ সময় ১১ দফা দাবী বাস্তবায়নে বিক্ষোভ করেন পুলিশ সদস্যরা । এ সময় নারী-পুরুষ পুলিশ সদস্যদের হাতে বিভিন্ন ফেস্টুনে লেখা ছিলো আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেবনা, যদি হয় সংস্কার পুলিশ হবে জনতার , নৃশংস হামলায় নিহত পুলিশের ছবির ফেস্টুন হাতে নিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন পুলিশ সদস্যরা। এ সময় বক্তব্য দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন পুলিশ সুপার জিএম আবুল কালাম আজাদ পিপিএম। তিনি বলেন দেশে এত পুলিশ মারা গেলো ,কেউ একবারও পুলিশ হত্যার বিচার চায়নি। কেন ,কার জন্য পুলিশের ইউনিফর্ম (পোষাক ) গায়ে পরব । আমি আপনাদের অভিভাবক হিসেবে এ জেলায় আছি ,আইজিপি’র সাথে আলাপকরে এ বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বের সাথে দেখা হবে ,অবশ্যই বিচার করা হবে। পুলিশের দাবিগুলো আমি আইজিপি স্যারের কাছে তুলে ধরব।

এ সময় রাজবাড়ী পুলিশ সুপার জিএম আবুল কালাম আজাদ পিপিএম এর হাতে ১১ দফা দাবী বাস্তবায়নে বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল বরাবর স্বারকলিপি তুলে দেন রাজবাড়ী পুলিশের অধস্থন কর্মচারীরা । এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রেজাউল করিম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ ইফতেখারুজ্জামান সহ পুলিশের কর্মকরতা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন ।

১১ দফা দাবীগুলো হলো: 

০১.ক) স্বাধীন কমিশন গঠন, পুলিশ বাহিনীকে সংস্কার করে দলীয় প্রভাব মুক্ত জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত করতে হবে। আমরা যে রংয়ের ইউনিফর্ম পরিধান করে কলংকিত হলাম সেই পোশাকে রং পরিবর্তন করে কনস্টেবল হতে আইজি মহোদয় পর্যন্ত একই ড্রেস কোড করতে হবে।

খ) আমাদের সকল পুলিশ সদস্য ও তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং এর সাথে সাথে যে সকল সিনিয়র অফিসাররা ক্ষমতার লোভী দালাল পুলিশ অফিসারদের কারণে আমাদের শত শত পুলিশ সদস্য ও সাধারণ জনতা মৃত্যুবরণ করেছে তাদেরকে গ্রেফতার করে অনিতিবিলম্বে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে বিচার করতে হবে ও তাদের অবৈধ সমস্ত্র সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে পুলিশের কল্যাণে ব্যবহার করতে হবে।

০২. ক) চলমান সহিংসতার যে সকল পুলিশ সদস্য আহত ও নিহত হয়েছে তাদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপুরণের
ব্যবস্থা করতে হবে, যে সকল পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যান-মালের নিরাপত্তার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র
ব্যবহার করেছেন তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রকারের বিভাগীয় ব্যবস্থা অথবা হয়রানী করা যাবে না ।

খ) সকল পুলিশ সদস্যদের অন্যান্য সংস্থার চাকুরীর মত শ্রম আইন অনুযায়ী ০৮ (আট) ঘন্টা কর্মঘন্টা নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে যদি ৮ (আট) ঘন্টার বেশি দায়িত্ব পালন করতে হয় তাহলে ওভারটাইম হিসেবে গণ্য করতে হবে।

০৩. ক) প্রত্যেক পুলিশ সদস্যদের প্রতিবছর ২০ (বিশ) দিন নৈমিত্তিক ছুটির পাশাপাশি ০২(দুই) মাস অর্জিত ছুটি ভোগের ব্যবস্থা করতে হবে।

খ) প্রত্যেক পুলিশ সদস্যর নিজ জেলা ব্যতিত পর্যায়ক্রমে পদায়নের ব্যবস্থা করতে হবে এবং অধস্তন পুলিশ সদস্যদের আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

০৪. আমাদের সকল পুলিশ সদস্য ও পরিবারের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে এবং তার পাশাপাশি ব্যক্তিগত চিকিৎসা করা হলে তাহার ভাউচার অনুসারে কল্যাণ তহবিল থেকে সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ।

০৫. ক) বিভাগীয় পদোন্নতি পরীক্ষার ক্ষেত্রে একবার পরীক্ষায় পাশ করার পরে পর্যায়ক্রমে পদোন্নতির ব্যবস্থা করা এবং অধস্তনদের পদোন্নতি বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনে সুপারনিউমারি পদ সৃজন করতে হবে।

খ) ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বিগত ১৫ (পনের) বছরে যারা সুবিধা বঞ্চিত হয়েছেন তাদের দায়িত্ব দিতে হবে এবং ওসি হিসেবে ০২(দুই) বারের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না এবং ৫৪ (চুয়ান্ন) বছরের বয়সের সীমাবদ্ধতা তুলে দিতে হবে।
০৬. অধস্তন পুলিশ সদস্যদের সাথে পিআরভি অনুসারে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করতে হবে এবং ব্যক্তিগত কাজে কোন পুলিশ সদস্যকে ব্যবহার করা যাবে না ও কনস্টেবল থেকে সকল পর্যায়ের অফিসারদের পোষ্টিং বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে।

০৭. সার্জেন্ট এবং সাব-ইন্সপেক্টরদেরকে পিএসসির অধীনে একই নিয়োগের মাধ্যেমে সকল ইউনিটে পদায়ন করতে হবে এবং বর্তমানে কর্মরত সার্জেন্টদেরকে তদন্ত ক্ষমতা দিতে হবে ও এটিএসআই কে এএসআই (নিঃ) হিসেবে সমন্বয় করতে হবে। জনগণের স্বার্থে এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ট্রাফিক বিভাগের অবৈধ রেকার বাণিজ্য বন্ধ করা এবং মামলার টার্গেট প্রদান থেকে বিরত থাকতে হবে।

০৮. কমিউনিটি ব্যাংক এবং সকল কল্যান তহবিলের সুস্পষ্ট হিসাব প্রতিবছর সকলকে প্রদান করতে হবে এবং লোনের ক্ষেত্রে সুদের ১০(দশ)% এর নিচে নিয়ে আসতে হবে।

০৯. ক) নবম গ্রেড থেকে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়ে ষষ্ঠ গ্রেড নিশ্চিত করতে হবে এবং একই পদে সর্বোচ্চ ১০(দশ) বছরের মধ্যে পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে।

খ) ইন্সপেক্টর থেকে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চাকরী হারালে সকলে পেনশনসহ সকল ধরণের সুযোগ সুবিধা পায় কিন্তু কনস্টেবল থেকে এসআই পর্যন্ত এই সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে এবং যে সকল সদস্যদের বরখাস্ত করে রাখা হয়েছে তাদেরকে মানবিক কারণে বিবেচনা করতে হবে।

১০. ইন্সপেক্টর থেকে ৬০% এএসপি পদে পদোন্নতি দিতে হবে। পদোন্নতির জটিলতা নিরশনের জন্য যেসকল পদে পদোন্নতির জন্য সুপার নিউমারি চালু করতে হবে এবং নূন্যতম পুলিশ সুপার পর্যন্ত পদোন্নতির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অধস্তন পুলিশ সদস্যদের টিএ/ডিএ বিল যথাসময়ে প্রদান করতে হবে ও সোর্স মানি প্রদান করতে হবে।

১১. পুলিশের সকল সদস্য সকল ইউনিটে চাকুরী করার সুযোগ রাখতে হবে (স্বায়ত্বশাসিত এবং টেকনিক্যাল) বলে কোন ইউনিট থাকবে না ও সবাইকে সব ইউনিটে বদলীর সুযোগ থাকতে হবে। পুলিশ সুপারের নিচে বডিগার্ড অর্ডারলি নিয়ম বন্ধ করতে হবে।
আমাদের দাবীসমূহ ০৭(সাত) কার্যদিবসের মধ্যে গেজেট আকারে প্রকাশ করতে হবে। অন্যথায় সমগ্র বাংলাদেশ পুলিশের কর্মবিরতি চলমান থাকবে।

সর্বশেষ পোষ্ট

এই ধরনের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here