Sunday, December 22, 2024

দুর্গম চরাঞ্চলে ভরসা ঘোড়ার গাড়ি

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের বিভিন্ন চরাঞ্চলে ঘোড়ার গাড়ী একমাত্র ভরসা বিভিন্ন জিনিষ পত্র হাটে বাজারে আনা নেওয়ার জন্য।  পদ্মার বিস্তীর্ন পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের এই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি এলাকা। যা এককথায় শহর থেকে জন বিচ্ছিন্ন বলা চলে।এ উপজেলার  ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে পদ্মা নদী। নদীবেষ্টিত এই জনপদে রয়েছে বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল। গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম, দৌলতদিয়া ইউনিয়নের দুর্গম কুশাহাটা, রাখাল গাছি, বেতকা, চর বেতকা, মজলিশ পুর, দেবীপুর, বাহির চর, মুন্সি বাজার, এক নং ব্যাপারী পাড়া, উজানচর ইউনিয়নের, চর কর্নেশোনা, সানজদ্দি ব্যাপারী পাড়া, তমছের মাতব্বর পাড়া,  পাড়া সহ এই বিস্স্তীর্ন অঞ্চলের মানুষ ভারি পন্য ব্যাবহারের জন্য এখনো ঘোড়ার গাড়ির উপর নির্ভর করতে হয়। বর্ষায় নৌকা ব্যবহার হলেও গ্রীষ্মে চরাঞ্চলের বালুতে ঢেকে যায় সড়ক। তাই বালুচরের মানুষদের পরিবহন মানেই অপিহার্য হয়ে দাঁড়ায় ঘোড়ার গাড়ি। এক সময় জেলার প্রায় সব অঞ্চলেই দেখা মিললেও এখন শুধু চরেই চলছে ঘোড়ার গাড়ি।
এলাকার বয়স্ক কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারা বলেন, আগে ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন ছিল চোখে পড়ার মতো। সময়ের ব্যবধানে এখন আর শহরে ঘোড়ার গাড়ির দেখা মেলে না। এখন ঘোড়ার গাড়ির দেখা মেলে চরে।
সরেজমিনে দেখা যায়, গোয়ালন্দ উপজেলার বিভিন্ন চরে মালামাল পরিবহনে ব্যবহার হচ্ছে ঘোড়ার গাড়ি। এই গাড়ি ব্যবহারের ফলে যেমন দ্রুত সময়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়া সহজ, তেমনি কমছে পরিবহন খরচ। পদ্না নদীবেষ্টিত গোয়ালন্দ  উপজেলার এক নং বেপারি পাড়ার  আছির উদ্দিন বলেন, একটি ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে প্রতিদিন এক হাজার টাকা আয় হয়। এভাবেই চলে তার সংসার। প্রতিদিন নদীর ঘাট ও ইটভাটা  থেকে মালামাল আনা নেয়া করে গত পাঁচ বছরে সংসরের অনেক উন্নতি হয়েছে। তিনি আগে দিনমজুর হিসেবে প্রতিদিন তিনশ থেকে সর্বচ্চ পাঁচশ টাকা আয় করতেন। আর এখন প্রতিদিন এক হাজার থেকে অনেক সময় দেড় হাজার টাকাও আয় করেন।
চরকর্নেশোনার  ঘোড়ার গাড়িচালক আজাহার উদ্দিন  বলেন, চরে যোগাযোগের কোনো সড়ক নেই। তাই চরের আকাবাঁকা-উঁচুনিচু রাস্তায় ঘোড়ার গাড়িতে মালামাল পরিবহন করতে হয়। এখান গৃহস্থের, পাট, পিয়াজ, রসুন ধান সব কিছুই হাটে নেওয়ার জন্য ঘোড়ার গাড়ি ব্যাবহার করা হয়৷ এবং কৃষকরা যখন মাঠে ধান ও পাট কাটে সেগুলো বহন করার জন্য ঘোড়ার গাড়ি ব্যাবহার করা হয়।
গোয়ালন্দ পৌরসভার কলেজ পাড়ার তারক বলেন আমার বাবার ঘোড়ার গাড়ি ছিল।  ইউনিয়নের মাহবুবুর রহমন কৃষি শ্রমিকের পেশা পরিবতর্ন করে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে একটি ঘোড়া কিনে নেন। পরে সেই ঘোড়ার গাড়ি দিয়েই চলছে সংসার।
উজানচর ইউনিয়নের ব্যবস্যায়ী পান্নু  মিয়া বলেন, বন্যার সময় নৌকায় মালামাল পরিহন করা হত। কিন্তু এখন নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে এক চর থেকে আরেক চরের কৃষিপণ্য বা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পরিবহনে একমাত্র ভরসা ঘোড়ার গাড়ি।
গোয়ালব্দ উপজেলার দৌলতদিয়া  ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডল  বলেন, হারাতে বসেছিল এই ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার গাড়ির ব্যবহার। ইঞ্জিলচালিত পরিবহনের ভিড়ে ঘোড়ার গাড়ি আর শহরে দেখা যায় না। কিন্তু পদ্মা  নদীবেষ্টিত বিভিন্ন চরে গত কয়েক বছর থেকে বেড়েছে ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন। এখন চরে গেলেই দেখা মেলে এই ঘোড়ার গাড়ির।

সর্বশেষ পোষ্ট

এই ধরনের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here