স্টাফ রিপোর্টার: বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ও দেশ ছাড়েন। এরপর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার নেতৃত্বে গঠন করা হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তিন মাস পূর্ণ হলো আজ। দায়িত্ব নেয়ার বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে তিন মাস পার করেছে এই সরকার। এর মধ্যে কোনোটি দৃশ্যমান, আবার কোনোটি অদৃশ্য চ্যালেঞ্জ। প্রথমত দেশের মানুষের নজিরবিহীন সমর্থন এবং দ্বিতীয়ত উন্নয়ন সহযোগীসহ বহির্বিশ্বের সমর্থন ও স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতার আশ্বাস। কিন্তু তিন মাসে সম্ভাবনার সবটুকু কাজে লাগানো যায়নি। সরকার বলছে সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে আগামী দিনের পথ চলতে চায়।
তবে তিন মাসে প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ার কথাও আলোচনায় আছে। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে গতানুগতিক ও আমলাতান্ত্রিক ধারার কারণে সাফল্য সীমিত বলে মনে করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে- একজন উপদেষ্টাকে অনেক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়ার কারণে কাজের অগ্রগতি কম। প্রশাসন এখনো আগের সরকারের দোসরমুক্ত হতে পারেনি। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনে প্রশাসন ও সামরিক বাহিনীতে যারা অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত হয়েছেন, তারা এখনো প্রতিকার পাননি। এ বিষয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই বলেও ভুক্তভোগীরা মনে করছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো সন্তোষজনক নয়। তবে কোনো সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা বিচারে এটি যথেষ্ট সময় নয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত তিন মাসে অন্তর্বর্তী সরকার কার্যকর ভূমিকা রেখেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, তিন মাসে বর্তমান সরকার অবশ্যই কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। তারা অনেক কাজ করেছে। সবাই এই সরকারকে সহযোগিতা করলে, উপযুক্ত ও যৌক্তিক সময়ে তারা নির্বাচন দিতে পারবে। তাহলে জাতির সামনে যে চ্যালেঞ্জ আছে তা পূরণ হবে।
গত ২২ অক্টোবর শহীদ মিনারে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদচ্যুতি, ৭২-এর সংবিধান বাতিল, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে সময়সীমা বেঁধে দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তাদের আলটিমেটাম শেষ হলেও এক ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা ছাড়া আর কোনো দাবিই পূরণ হয়নি। বিশেষ করে সংবিধান বাতিল এবং রাষ্ট্রপতির অপসারণে বিএনপির মত না পাওয়ায় আলোর মুখ দেখেনি তাদের দাবি। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির অফিসে আগুন দেয়াকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সমালোচনার সৃষ্টি হয়। যদিও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেউ এর সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেন সমন্বয়ক সারজিস আলম।
এ ছাড়া সমালোচনার মুখে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ১১টি রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার নির্দেশনা চেয়ে করা রিটও প্রত্যাহার করা হয়। সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলামের ‘মেট্রোরেলে আগুন না দিলে কিংবা পুলিশ হত্যা না করা হলে, এত সহজে বিপ্লব অর্জন করা যেত না’ আপত্তিকর বক্তব্যের কারণেও বিপাকে পড়তে হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে। পরে তাকে শোকজ করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সমন্বয়ক বলেন, আমাদের কয়েকটি সিদ্ধান্ত একটু সময় নিয়ে করা উচিত ছিল। জাতীয় পার্টির অফিসে আগুন দেয়ার ঘটনার আগে আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুকে পোস্ট না করলে হয়তো সমালোচনার সৃষ্টি হতো না। এছাড়া আরেকটু চিন্তাভাবনা করে রিট করা গেলে সমালোচনা হতো না। হাসিব আল ইসলামের বক্তব্য নিয়েও আমরা অনেকটাই বিপাকে পড়েছি। তবে আশা করি, সব সংকট কাটিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা পূরণে কাজ করবে।
ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের গত সাড়ে ১৫ বছরের দুঃশাসন থেকে ঘুরে দাঁড়ানো অবশ্যই কঠিন এবং সরকারকে বেগ পেতে হচ্ছে। এছাড়া এত বেশি দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন হচ্ছে, আমাদের মূল কাজে ফোকাস করা কঠিন হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তাদের চক্রান্ত অব্যাহত রেখেছেন। আমরা যে পাঁচ দফা দাবি দিয়েছি, সেটা পূরণ হলেই আমাদের গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা অনেকটাই পূরণ হবে বলে আমরা মনে করি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, তিন মাসে এ সরকার যথেষ্ট অর্জন করেছে। তারা সিনসিয়ার ছিল, কোনো কেলেঙ্কারির কথা শুনেছেন? আমরা বলতে পারি, মোটাদাগে ৫টা কাজ হয়েছে। স্মুথ একটা ট্রানজিশন হয়েছে। একটা ভঙ্গুর অবস্থা থেকে ইকোনমিক রিকভারি হয়েছে। ম্যাসিভ গ্লোবাল সাপোর্ট পেয়েছি আমরা। রিফর্ম এবং ইলেকশনের একটা রোডম্যাপ দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ করে রিফর্ম কতটুকু করা হবে এবং সে অনুযায়ী ইলেকশনের ডেট ঠিক হবে। জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি, বন্যা, গার্মেন্টসে অশান্তিসহ অনেকগুলো ক্রাইসিস ছিল। এ ক্রাইসিসগুলো থেকে উত্তরণে, কতটা ভালোভাবে মোকাবিলা করা যায় সে চেষ্টা করেছে সরকার।