স্টাফ রিপোর্টারঃ রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি থানায় গোবিন্দপুর গ্রামের চাঞ্চল্যকর সালমা (৩৩) হত্যার রহস্য উদঘাটন, আসামি গ্রেফতার করেছে পুলিশ ।
রাজবাড়ী পুলিশ সুপারের চৌকস অনুসন্ধানে একটি সাজানো আত্নহত্যাকে হত্যা মামলা রুজু ও আসামী গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ ঘটনায় নিহত সালমার বাবা মোঃ সৈয়দ আলী মন্ডল (৬৩) বাদী হয়ে একটি হত্যামামলা রুজু করেন । মামলার এজাহার সূত্রে জানাগেছে, মৃত সালমা আক্তার (৩৩) তার বড় মেয়ে। গত ২০০৭ সালে জনৈক আকামুদ্দিন সরদার (৪০), পিতা-ইসলাম সরদার, সাং-গোবিন্দপুর, থানা-বালিয়াকান্দি, জেলা-রাজবাড়ী এর সাথে তার মেয়েকে ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক পারিবারিক ভাবে বিবাহ দেন। উক্ত সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান আছে। গত ২০২১ সালে পারিবারিক কলহের জের ধরে বাদির মেয়ের বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর থেকেই বাদির মেয়ে তার (বাদি) বসতবাড়ীর পাশে ছেলে সন্তানসহ আলাদাভাবে বসবাস করে।
গত ১লা নভেম্বর সন্ধ্যা অনুমান ৬.টার দিকে বাদির মেয়ে সালমা ঘাস ও কলাপাতা নেওয়ার জন্য বাদির বাড়ীতে আসে এবং কিছুক্ষন ঐ বাড়ীতে থাকার পর মাগরিব এর নামাজের সময় পুনরায় বাড়ীর উদ্দেশ্যে চলিয়া যায়। পরবর্তীতে বাদির নাতি সন্ধ্যা অনুমান সারে ৬ টার সময় বাদির মেয়ে সালমা আক্তারকে খোঁজার জন্য বাদির বাড়ীতে আসে। তখন বাদি তার নাতিসহ মেয়ে সালমাকে খুৃঁজতে থাকেন। খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে রাত অনুমান সারে ১০ টার সময় সালমার বসতবাড়ীতে যাওয়ার রাস্তায় তার পড়নের সেন্ডেল পড়ে থাকতে দেখে বাদির নাতি বলে যে, “এইতো আমার মায়ের সেন্ডেল”। তখন বাদি তার নাতিকে নিয়ে হলুদ ক্ষেতসহ লেবু বাগানে খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে দেখেন, তার মেয়ের মৃতদেহ গোবিন্দপুর গ্রামস্থ মেয়ের বসতবাড়ীর উত্তর-পশ্চিম কোনে জনৈক সায়েন্স উদ্দিন শেখ এর লেবু বাগানে একটি লেবু গাছের ডালার সাথে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় ফাঁস লেগে পড়ে আছে। বাদি তখন চিৎকার দিলে স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে এগিয়ে এসে পুলিশকে সংবাদ দেয়। থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সালমার মৃতদেহের সুরতহাল প্রস্তুতপূর্বক ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেন। বাদির ধারণা, অজ্ঞাত ব্যক্তি/ ব্যক্তিরা পরস্পর যোগসাজসে পূর্ব আক্রোশের জের ধরে তার মেয়েকে হত্যা করে হত্যাকান্ডকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার উদ্দেশ্যে তার মেয়ের গলায় ওড়না পেঁচিয়ে লেবু গাছের ডালের সাথে বেঁধে রেখেছে। এই ঘটনায় বালিয়াকান্দি থানার মামলা নং- ০১, তারিখ – ০২/১১/২০২৪ ইং, ধারা- ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড রুজু করা হয়।
মামলার ঘটনা সম্পর্কে অবগত হয়ে রাজবাড়ী জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার মোছা: শামিমা পারভিন এর সার্বিক দিক-নির্দেশনায় বালিয়াকান্দি থানাসহ জেলা গোয়েন্দা শাখা নিবিড় তদন্ত শুরু করে। তদন্ত চলমান থাকার এক পর্যায়ে মামলার ঘটনার সাথে জড়িত আরিফ সেখ (৩৬), পিতা- আলাউদ্দিন সেখ, সাং – গোবিন্দপুর, থানা – বালিয়াকান্দি, জেলা রাজবাড়ীকে ২০/১২/২০২৪ ইং ভোর ০৫.০০ ঘটিকার দিকে ঢাকা জেলার সাভার থানার গেন্ডা এলাকা হতে আটক করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক আরিফ সালমা হত্যায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ডিসিস্ট সালমার আচার-আচরণ ছিল উগ্র। তার বাড়ির সীমানায় থাকা রাস্তায় কেউ চলাচল করলে তাকে বকাবকি করত, টিউবওয়েল এর পানি নিতে আসলেও খারাপ ব্যবহার করত। আসামির পরিবারে সবসময়ই অশান্তি লেগে থাকত। এজন্য সে হতাশাগ্রস্ত ছিল। ঘটনার দিন ডিসিস্ট সালমার বাড়ির সীমানা দিয়ে হেঁটে আসার সময় সালমা আসামি আরিফকে গালি দেয়। পাল্টাপাল্টি গালিগালাজের এক পর্যায়ে আসামি বলপ্রয়োগ করে ডিসিস্ট এর গলা চেপে ধরে শ্বাসরুদ্ধ করে অজ্ঞান করে, পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে মহিলাকে তার পরনের ওড়না দিয়ে লেবু গাছের সাথে পেঁচিয়ে দেয়। গ্রেফতারকৃত আরিফকে অদ্য ২০/১২/২০২৪ ইং বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়। আরিফ বিজ্ঞ আদালতে ফৌকাবি ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
শুক্রবার (২০ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে নিজ কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেন রাজবাড়ী পুলিশ সুপার মোছা.শামিমা পারভীন। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরিফ আল রাজীব, ডিবি’র ওসি মফিজুল ইসলাম,ডি আই-১ সহ স্থানীয় প্রিন্ট ও ইলেন্ট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিগণ উপস্থিত ছিলেন।