অনলাইন ডেস্ক: বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে সমাজ ও পরিবারে নারীর কৃতিত্বকে স্মরণ ও সম্মান জানাতে প্রতিবছর এ দিনটি পালন করা হয়। জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তবে দিনটি কী জন্য? কবে থেকে পালন হচ্ছে? এসব বিষয় অনেকেরই অজানা। চলুন বিশেষ এই দিনে, জেনে নেওয়া যাক দিবসটি সম্পর্কে বিস্তারিত সব তথ্য-
১৮৫৭ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সেলাই কারখানায় নারী শ্রমিকরা ভোটাধিকারসহ তাদের মর্যাদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট দাবিতে আন্দোলন করলে তারা পুলিশি নির্যাতনের শিকার হন। ১৯১০ সালে এ দিনটিকে নারী দিবস হিসাবে পালনের প্রস্তাব করেন জার্মান নারী নেত্রী ক্লারা জেটকিন।
১৯১১ সালে প্রথম বেসরকারিভাবে বিভিন্ন দেশে দিনটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এর দীর্ঘ ৭৩ বছর পর ১৯৮৪ সালে জাতিসংঘ ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এর পর থেকে দিনটিকে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো সরকারিভাবে নারী দিবস হিসাবে পালন করে আসছে।
জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশও ৮ মার্চ নারী দিবস পালন করে থাকে এবং দিনটিতে নারী সমাজের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও তাদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়।
জার্মান নারী নেত্রী ক্লারা জেটকিন যখন আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ধারণাটি উত্থাপন করেন, তখন তিনি নির্দিষ্ট কোনো তারিখ উল্লেখ করেননি।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুসারে, ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের আগ পর্যন্ত দিনটি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দিষ্ট করা যায়নি। একই বছর রুশ নারীরা ‘রুটি এবং শান্তি’-এর দাবিতে তৎকালীন জারের (রাশিয়ার সম্রাট) বিরুদ্ধে ধর্মঘট শুরু করেন। ধর্মঘটের চতুর্থ দিনে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয় জার। এরপরই রাশিয়ার অস্থায়ী সরকার তখন নারীদের আনুষ্ঠানিক ভোটাধিকার দিয়েছিলেন।
সে সময় রাশিয়ায় প্রচলিত জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছিল নারীদের ধর্মঘট। আর গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে এই দিনটি ছিল ৮ মার্চ। পরবর্তীতে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৮ মার্চকেই আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ওয়েবসাইট অনুযায়ী এ দিবসের প্রতীক বেগুনি, সবুজ এবং সাদা। ‘বেগুনি রঙ দিয়ে ন্যায়বিচার ও মর্যাদাকে বোঝানো হয়। সবুজ আশার প্রতীক আর সাদা শুদ্ধতার।
১৯০৮ সালে যুক্তরাজ্যের উইমেনস সোশ্যাল অ্যান্ড পলিটিক্যাল ইউনিয়ন (ডব্লিউএসপিইউ) এই রঙগুলোকেই নির্দিষ্ট করেছিল। তবে এই ধারণা নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে।
নানা আয়োজনে নারী দিবস পালন করা হলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জেন্ডার সমতার বিষয়টি এখনো পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। অথচ দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য নারী-পুরুষ সবার অংশগ্রহণ সমানভাবে জরুরি। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে বেড়েছে নারীর অংশগ্রহণ। তবে তা কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে অনেক কম।
“নারীদের শিক্ষা, চিকিৎসা, স্বাস্থ্য তাদের মনন জগৎ, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে যেভাবে আসলে ট্রমাটাইজ হয়ে আছে, সেখান থেকে উত্তরণের জন্য যথাযথ স্বাস্থ্যগত পলিসি নেওয়া, নানামুখী শিক্ষার দিকে তাদেরকে ফ্যাসিলিটেট করার জন্য আমাদের ভূমিকা থাকবে।”
এখনো দেশের নারীরা নানা ধরনের পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতন-বঞ্চনার শিকার। নারীদের অগ্রগতির পথে বড় বাধা যৌতুক প্রথা, বাল্যবিয়ে, ধর্মীয় কুসংস্কার, পারিবারিক জীবনে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের আধিপত্য। এসব দূর করার জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া আজ দিবসটি উপলক্ষ্যে বেলা ১১টায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে এক বর্ণাঢ্য র্যালি অনুষ্ঠিত হবে। র্যালিটি বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু করে কাকরাইল মোড় হয়ে পুনরায় বিএনপি অফিসের সামনে এসে শেষ হবে।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান এবং প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সভাপতিত্ব করবেন মহিলা দল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আফরোজা আব্বাস। সঞ্চালনা করবেন মহিলা দল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ। ‘