Thursday, September 19, 2024

পূজাকে সামনে রেখে ব্যাস্ত সময় পার করছে মৃৎশিল্পীরা

আরমাত্র কয়েকদিন পর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয়া দূর্গা পূজা। এই উৎসবকে সামনে রেখে রাজবাড়ী জেলার পাঁচটি উপজেলার সর্বোস্থানে মন্দিরগুলোতে দেবী দূর্গার প্রতীমা গড়ার কাজে ব‍্যস্ত দিন অতিবাহিত করছেন মৃৎশিল্পীরা।
তারা দিন রাতকে একত্র করে নিপুন ছোঁয়ায় তৈরী করে চলেছেন মা দূর্গা দেবীর প্রতীমা। একাত্তচিত্তে মনের মাধুরী মিশিয়ে কাজ করে চলেছে মৃৎশিল্পীরা।

আগামী ৬ অক্টোবর মহালয়ার মধ‍্য দিয়ে শুরু হবে এবারের দূর্গা পূজার কাজ। ১১ অক্টোবর মহা ষষ্ঠি তিথিতে পূজার মূল কার্য‍্য শুরু হয়ে ১৫ অক্টোবর মহ বিজয়ি দশমী দূর্গা প্রতীমা বিসর্জনের মধ‍্যদিয়ে এবারের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয়া দূর্গা পূজা সম্পন্ন হবে।
গত বছরে মহামারি করোনার জন‍্য তেমন জাকিয়ে হয়নি দূর্গা মায়ের পূজা। ঈশ্বরের কৃপায় এই বছরে অনেকটাই কমে গেছে করোনার প্রাদূর্ভাব। তাই আশা করছি এবছরে আমরা ধুম ধামে দূর্গা মায়ের পূজা করতে পারবো। অনেকেই মন্দির দর্শণ ও প্রতিমা দর্শণ করতে যান বিভিন্ন জায়গায়। কিন্তু আমাদের ঘরের পাশেই রয়েছে প্রায় শতবর্ষ ধর ধর একটি মন্দির। যেখানে গেলে আত্মতৃপ্তি ঘটে। আর সেটি হলো রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের প্রত‍্যন্ত গ্রাম বাঘুটিয়ায়।
সরেজমিন ঘুরে বহরপুরের বাঘুটিয়া গ্রামে মৃত শ্রীযুক্ত বাবু অক্ষয় কুমার দাসের ছেলে শ্রী সুবোধ কুমার দাস ও শ্রী নিরোদ কুমার দাস এর বাড়ীর আঙ্গিনায় অবস্থিত দীর্ঘ আট দশকেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা শ্রী শ্রী দূর্গা পূজা মন্দিরের পূজা উৎসব। গত বছরে ছিল না তেমন জাকজমক পূর্ণতা। তবে এবারে আশা করছি আলোক সজ্জ্র্বাসহ একটু ভিন্নতা আনার জন‍্য। তবে আমরা সরকারের নীতি নির্দেশনা মেনে শ্রী দূর্গা মায়ের পূজা করার প্রস্তুতি হাতে নিয়েছি। কথাগুলো বললেন মৃত শ্রীযুক্ত বাবু অক্ষয় কুমার দাসের ছেলে শ্রীমান সুবোধ কুমার দাস।

বাঘুটিয়া দাসবাড়ী শারদীয়া দূর্গা মন্দিরের সভাপতি শ্রী সুবোধ কুমার দাস ও তাঁর ভাই শ্রী নিরোদ কুমার দাস কলেন, আমাদের দাদু শ্রীযুক্ত বাবু চন্দ্র কান্ত দাসের আমল থেকে বাঘুটিয়া গ্রামের আমাদের বাড়ীতে পারিবারিক পূজা মন্দিরে দূর্গা পূজা করা হতো। বংশ পরমপরায় আমাদের বাবা শ্রীযুক্ত বাবু অক্ষয় কুমার দাসও এই মন্দিরে দূর্গা পূজা করতে থাকে। ধীরে ধীরে এই মন্দিরের পূজায় সার্বিকভাবে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয় এলাকার অনেকেই। আমরাও সবার সহযোগীতায় আজ আট দশকের বেশি সময় ধরে এই মন্দিরে শ্রী শ্রী দূর্গা মায়ের পূজা করে আসছি। বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের এই পুরানা মন্দিরের পূজা দেখতে আসে অনেকেই। এখানে সরকারের তেমন কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে এই মন্দিরের যতটা উন্নয়ন সম্ভব তা করেছি। সরকার একটু নজর দিলে মন্দিরটি সুন্দর করে পরিপাটি করা যেতো। সুন্দর করতে পারলে এখানে আরো দর্শনার্থীদের ভীর জমতো। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির নির্দেশনায় জেলা পূজা উদযাপন কমিটি মন্দিরে পূজা পালনে কিছু দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। করোনার কারণে সরকারের দেওয়া ঘোষনা স্বাস্থ‍্যবিথী মেনে পূজা উদযাপনের কথা বলেছেন।

বাঘুটিয়া দাসবাড়ী মন্দির সম্পর্কে জানতে চেয়ে কথা হয় একই গ্রামের সোনামনি কিন্ডার গার্টেন এর অধ‍্যক্ষ শ্রী অখিল বন্ধু দাসের সাথে তিনি বলেন, আমি আমার জীবদ্দশায় দেখছিএই মন্দিরে নিয়মিত শারদীয়া দূর্গা পূজা পালিত হয়ে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও মন্দিরটিতে চলছে দূর্গা মায়ের পূজার প্রস্তুতি। এই প্রায় শতবর্ষী মন্দিরে পূজা চলাকালীন সময়ে রাজবাড়ী ফরিদপুর, মাগুড়া, কুষ্টিয়া, পাবনা জেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী এখানে পূজা দেখতে ভীর জমায়া। সেই সাথে দেখা হয় প্রায় শতবর্ষী মন্দিরটি। তবে এই বাড়ীওয়ালার একার পক্ষে মন্দিরটি পরিপাটি করা একেবারেই অসম্ভব। সরকার একটু সুনজর দিলে বাঘুটিয়ার এই মন্দিরটি হয়ে উঠতে পারে দর্শনার্থীদের পূর্ণস্থল। উন্নয়নের সরকার একটু নজর দিলে এই মন্দিরটি সুন্দর পরিপাটি করা যেত। এবং দর্শনার্থীর সংখ‍্যাও বৃদ্ধি পেত।

এবারে ৬৪ টি জেলায় মোট ৩১,৯৩২টি মন্দিরে দূর্গা পূজা হবে বলে জানা গেছে। তার মধ‍্যে ঢাকা ৯৩৯টি, গাজীপুর ৩৯৫টি, ময়মনসিংহ ৭৮৪টি, ফরিদপুর ৭৭৪টি, কিশোরগঞ্জ ৩৮৩টি, নেত্রকোনা ৫১০টি, টাঙ্গাইল ১১৫৮টি, নরসিন্ধী ৩৩৬টি, মানিকগঞ্জ ৪৯৮টি, মুন্সিগঞ্জ ৩১৯টি, নারায়ণগঞ্জ ২১৫টি, গোপালগঞ্জ ১২০৪টি, জামালপুর ২১০টি, শরিয়তপুর ৯৩টি, রাজবাড়ী ৪৪১টি, শেরপুর ১৫১টি, মাদারীপুর ৪৪৫টি, চট্টগ্রাম ২২৪৫টি, কক্সবাজার ২৯৬টি, রাঙ্গামাটি ৫৪টি, খাগড়াছড়ী ৫৯টি, কুমিল্লা ৭৭৫টি, ব্রাক্ষ্মনবাড়ীয়া ৫৫৯টি, চাঁদপুর ২১০টি, নোয়াখালী ১৭১টি, ফেণী ১৪১টি, লক্ষ্মীপুর ৭৬টি, বান্দরবান ৩০টি, রাজশাহী ৪৩৩টি, নওগাঁ ৭৮১টি, পাবনা ৩৩১টি, সিরাজগঞ্জ ৫০২টি, মৌলভীবাজার ৯০৪টি, সুনামগঞ্জ ৪১১টি, হবিগঞ্জ ৬৬৮টি, সিলেট ৫৫৪টি, ঝালকাঠি ১৭১টি, বরগুনা ১৫২টি, ভোলা ১১৫টি, পিরোজপুর ৫৫৭টি, পটুয়াখালী ১৮৫টি, বরিশাল ৬২৭টি, চুয়াডাঙ্গা ১১৮টি, মেহেরপুর ৪৬টি, নড়াইল ৬৫০টি, মাগুড়া ৬৫১টি, ঝিনাইদহ ৪৫৫টি, সাতক্ষিরা ৫৮১টি, কুষ্টিয়া ২৫৩টি, যশোর ৬৮৯টি, বাগেরহাট ৬৪৩টি, খুলনা ১০০০টি, লালমনিরহাট ৪৫৪টি, গাইবান্ধা ৬৩১টি, নীলফামারী ৮৬৩টি, পঞ্চগড় ২৮৫টি, ঠাকুরগাঁও ৪৬৩টি, কুড়িগ্রাম ৫৪১টি, দিনাজপুর ১২৮০টি, রংপুর ৯৪৭টি, জয়পুরহাট ৩২২টি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ১৪০টি, নাটোর ৩৬৫টি ও বগুড়ায় ৬৯৭টি মন্দিরে সনাতন ধর্মের সবচেয়ে বড় উৎসব দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে।

এই উৎসবকৈ ঘিরে আইন শৃংঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা জোড়দার করতে এরই মধ‍্যে ব‍্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আইন শৃংঙ্খলা পরিস্থিতি সুন্দর রাখতে পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, কমিউনিটি পুলিশ, গ্রাম পুলিশ সার্বোক্ষনিক পাহারায় থাকবে। এবং ষ্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে র‍্যাপিড এ‍্যাকশন ব‍্যাটালিয়ন র‍্যাবের টহল থাকবে।

সর্বশেষ পোষ্ট

এই ধরনের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here