- সময় ভোর ছয়টা ঢাকা খুলনা মহাসড়কে প্রায় ছয় কিলোমিটার জ্যাম এই সময় ঢাকা খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ পদ্নার মোড় এলাকার একটি ট্রাকের দিকে তাকিয়ে চোখ আটকে প্রায় পনের বিশ জনের একটা দল। সেখানে পুরুষ, মহিলা ও শিশু রয়েছে। সংসারের যাবতীয় জিনিস নিয়ে তারা জীবন ও জীবিকার সন্ধানে যাচ্ছেন। শিশুরা মায়ের কোলে ঘুমিয়ে রয়েছে৷ দুজন কিশোর তারাও একে অপরের হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। খুব অল্প বয়সে সংসার নামক এই বিশাল চাপ তাদের কাধে ভর করেছে আর ক্লান্তিতে পরে আছে নিষ্পাপ শরীরগুলো। লোভ সামলাতে না পেরে তাদের রাজি করিয়ে উঠে পড়লাম ট্রাকে।
আমাদের দেশে আয়ের পথ টেকসই নয়, তাই তারা ছুটে চলেন এক জেলা থেকে আরেক জেলায়। জীবিকার তাগিদেই ভুলে থাকতে হয় জীবনের সুরক্ষা আর স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা। এভাবেই প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা চলছে ট্রাক-পিকআপচালক ও হেলপারদের জীবন। বেঁচে থাকার তাগিদে এভাবেই নিরন্তর চলে তাদের জীবনযুদ্ধ।
তারা ১৬ জনের একটা দল। তারা দাদনে খাটেন৷ গত বছর তাদের কে দাদন দিয়ে রাখা হয়েছে তাই সিজন শুরু হওয়ার আগেই তাদের কে ভাটায় যেতে হচ্ছে। আলাপের শুরুতেই দলের প্রধান মোহাম্মদ আলীর সাথে কথা হয় তিনি জানান তার আসছেন যশোরের নোয়াপাড়া থেকে। গতকাল রাত নয়টায় বারো হাজার টাকা ভাড়ায় এই ট্রাকে চড়ে রাত বারোটায় জমিদার ব্রীজ এলাকায় এসে জ্যামে পড়েছেন। এখন সকাল ছয়টা বাজে কেবল এই পর্যন্ত আসছি। রাতেই আমরা চলে যেতে পারতাম। সারারাত টাকার খেলা চলে দালালকে টাকা দিলেই আগে যেতে দেয় আমাগো তো টাকা পয়সা নাই। তাই এতদেরি।কি কাজ করেন, কোথায় কাজ করেন? এমন প্রশ্নের জবাবে জানান তারা ইটের ভাটায় কাজ করেন। গত বছর কাজ শেষে মালিক দাদন(অগ্রিম টাকা) দেয় যাতে পরের বছর আবার তার ভাটায় কাজ করি। দীর্ঘ দিন কাজ করতে ও থাকতে হয় তাই পরিবার নিয়ে এসেছি। এখানে ধামড়াই একটি ভাটায় কাজ করি ছোট ছেলেটা কাজ করে আবার ওর মাও এখানে কাজ করে তখন ছোট মেয়েটি সবার জন্য রান্না বান্না করে। এত অল্প বয়সে বাচ্চাদের দিয়ে কাজ করাচ্ছেন ওদের পড়াশোনা করান না। জবাবে তিনি বললেন পড়াশোনা দিয়ে কি হবে? আগে পেট তারপর পড়াশোনা। পেটতো পড়াশোনা মানে না সে শুধু খাবার চায়। পনের বছরের তরুণ নোমান বলেন বাপ নেই মা, ছোট বোন আর এক ভাইয়ের সংসার এখান থেকে দাদনের টাকা নিয়ে একটু আধটু জমি বন্ধক রেখেছি মা সেগুলো দেখে চাষ করে আমি এই কাজ বাকি পাঁচ ছয় মাস অন্য কাজ করি।প্রায় সবার একি ধরনের গল্প কারো স্বামী আরেকটা বিয়ে করেছে কেউ আরো একটু ভালো থাকার আশায় কাজ করার জন্য। জীবন ও জীবিকার তাগিদে শহরে ছুটে চলেন তারা
মাথাপিছু আয়ের হিসেবে দেশের প্রতিটি মানুষের বার্ষিক ২ হাজার ৬৪ ডলার। অর্থাৎ সে হিসাবে প্রতি মাসে আয় প্রায় ১৫ হাজার। তারপরও কেন জীবিকার কাছে জীবনের এমন পরাজয়? উত্তর জানেন না এই সমস্ত অসহায় খেটে খাওয়া মানুষ গুলো । তবে জানেন একদিন কাজ না থাকলে সেদিন পরিবারের ব্যয়ভার বহনে নাজুক পরিস্থিতিতে পড়তে হয় তাদের।