পাঁচ রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়ম ও প্রশ্নপত্র ফাঁস ও রিজার্ভ ব্যাবস্থাপনা নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১৮ই নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ সম্পর্কিত চিঠি দেওয়া হয়।
প্রথমত, ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সচিবালয় (বিএসসিএস)’র আওতায় গত ০৬ নভেম্বর ২০২১ তারিখে ৫টি ব্যাংকের ‘অফিসার (ক্যাশ)’ পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত পরীক্ষা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ছিল আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। উক্ত পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। এ প্রেক্ষিতে বিএসসিএস কর্তৃক ওই পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া, আহ্ছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বিএসসিএস’র আরো দু’টি পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্বে থাকায় তা ইতোমধ্যে স্থগিত করা হয়েছে এবং আহ্ছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে ভবিষ্যতে এ ধরনের পরীক্ষা পরিচালনার সুযোগ না দেয়ার জন্য কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। উল্লিখিত পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের সাথে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনশৃংখলা বাহিনী কর্তৃক ব্যবস্থার গ্রহণ করা হয়েছে এবং অধিকতর তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। উক্ত প্রশ্ন ফাঁসের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
তবে, ‘সিসিটিভি অপারেটর’ পদে গত ১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ায় প্রাথমিকভাবে ব্যাংকের যুগ্মপরিচালক আবদুল্লাহ আল মাবুদ এবং মো. আলমাস আলীকে ১৩ জুন ২০২১ তারিখে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং অভিযোগের সার্বিক বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন রয়েছে।
দ্বিতীয়তঃ বাংলাদেশ ব্যাংক বা সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের কোনো নিয়োগ পরীক্ষা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের ক্ষেত্রে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা হয়। এজাতীয় সেবা ক্রয়ের/গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রচলিত সকল বিধি-বিধান স্বচ্ছতার সাথে পরিপালন নিশ্চিত করেই বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের নির্বাহী কমিটির অনুমোদক্রমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণপূর্বক নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় ব্যাংকের কোনো পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তার প্রভাব বিস্তারের কোনো সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে আহ্ছানউল্লা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেয়ার ব্যাপারে পত্রিকায় যে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
তৃতীয়তঃ বাংলাদেশ ব্যাংকের হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্ট-১ বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে। অপরদিকে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সচিবালয় (বি এস সি এস) শুধুমাত্র সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের লোকবল নিয়োগের জন্য নিয়োগ সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে। হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্ট-১ এবং ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সচিবালয় (বি এস সি এস) দু’টি আলাদা প্রশাসনিক ইউনিট যা দু’জন ভিন্ন ভিন্ন ডেপুটি গভর্নরের উপর ন্যস্ত রয়েছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও স্ব-স্ব অধিক্ষেত্রে তাঁরা আলাদাভাবে কাজ করেন। তাই এ পর্যায়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের একে অপরের কাজে প্রভাবিত করার কোনো এখতিয়ার বা সুযোগ নেই। সুতরাং এ বিষয়ে পত্রিকায় যে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে তা-ও সঠিক নয়।
চতুর্থত, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ, পদায়ন, পদোন্নতি এবং বহিঃকেন্দ্রে বদলির জন্য স্বচ্ছ, সুনির্দিষ্ট এবং সুস্পষ্ট বিধি বিধান রয়েছে। উক্ত বিধান মোতাবেক কেন্দ্র জ্যেষ্ঠতা/আবেদনের ভিত্তিতে একজন কর্মকর্তাকে সাধারণত দুই বছরের জন্য বহিঃকেন্দ্রে বদলি/বহাল করা হয়। সুতরাং ব্যাংকের বহিঃকেন্দ্রে পোস্টিং/বহালের বিষয়টি কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নয়, বরং বাংলাদেশ ব্যাংক সৃষ্টিলগ্ন থেকে এটি একটি দাপ্তরিক রুটিন ওয়ার্ক। তবে, প্রতিষ্ঠানের বৃহত্তর স্বার্থে প্রয়োজন মনে করলে কর্তৃপক্ষ কোনো কর্মকর্তার বিশেষ দক্ষতাকে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে যে কোনো সময় যে কোনো প্রজেক্ট/ বিশেষ কাজে পদায়ন/ সংযুক্ত করতে পারে।
পঞ্চমতঃ বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চিত রিজার্ভ ব্যবস্থাপনার নীতিগত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত ও নিয়ন্ত্রিত হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইন্স (জগএ) ও উচ্ছ ক্ষমতাসম্পন্ন ইনভেস্টমেন্ট কমিটি (আইসি)-র মাধ্যমে। অপারেশনাল বিষয়সমূহ নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে রিজার্ভ ম্যানেজমেন্ট অপারেশনাল ম্যানুয়ালের নির্দেশনার আলোকে। রিজার্ভের বিনিয়োগ সংক্রান্ত সার্বিক কার্যক্রম দৈনিক ভিত্তিতে অডিটও হয়ে থাকে। ফলে, রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কার্যক্রমে কোনো একক বা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো অবকাশ নেই। একইভাবে রিজার্ভের বিনিয়োগ থেকে কারো পক্ষে ব্যক্তিগত কোনো অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করারও সুযোগ নেই। উল্লিখিত নিয়মনীতি ও গাইডলাইন্স এর আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক অত্যন্ত দক্ষতা এবং সফলতার সাথে রিজার্ভ ব্যবস্থাপনার সার্বিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে আসছে। রিজার্ভ হতে বিনিয়োগকৃত সকল অর্থই মুনাফাসহ সঠিক সময়ে আদায় হয়েছে এবং হচ্ছে।
kkn