Sunday, November 24, 2024

জেগে ওঠা বিশাল চরে বদলে গেছে পদ্মা চরের অর্থনীতি

পাল্টে যাচ্ছে ভাঙন কবলিত রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের পদ্মা চরের অর্থনীতি। জেগে ওঠা বিশাল চরে গড়ে উঠেছে বসতি, কৃষি কাজের অবাধ ভূমি ও খামার। শুষ্ক মৌসুমে বিশাল এই চরে চাষাবাদ করা হচ্ছে বাদাম,মাসকলাই, শস্য, পিয়াজ মসুরি, , রসুন। তাছাড়া বেগুন কপি, লাউ ও টমেটোসহ নানারকম শাকসবজি। চরের বিস্তৃতি বাড়ার সাথেসাথে তা স্থায়ী চরে পরিণত হচ্ছে । জনবসতিহীন দূর্গম চরে এখন বসেছে প্রাণের মেলা। চরে মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেকেরই রয়েছে মহিষ ও গরুর খামার। ফসলের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষ করে পাল্টে যাচ্ছে রাজবাড়ী ও পাবনা জেলার চরাঞ্চলের অর্থনীতি।

ফসল ও সবজি চাষের বিপুল সম্ভাবনাময় গোয়ালন্দ চর অঞ্চলে একটি পরিকল্পনা নিয়ে যাত্রা শুরু করলে সম্ভাবনাটি বাস্তবে রূপ নেবে। অভাব ঘুচবে অভাবী চরবাসীর। উৎপাদন বহুগুণে বাড়বে ফসল কিংবা সব্জিজাত সামগ্রীর। অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে বিশাল চর জুড়ে।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, বিশ বাইশ বছর আগে ভাঙন কবলিত পদ্মা নদীর চরগুলো ক্রমশ আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। আর এসব জমিতে আবাদ হচ্ছে নানা অর্থকরী ফসল। গত কয়েক বছরে খণ্ড খণ্ড আকৃতির বড় বড় চর জেগেছে। এসব চরে অনেক মানুষের মাথা গোজার ঠাঁই করে দিলেও বর্ষা মৌসুমে পড়তে হয় ভয়াবহ ভাঙনের ঝুঁকিতে। বর্তমানে চরের অনেক স্থানে বসতি স্থাপন করে তাতে বসবাস করছে মানুষেরা। নদীর পাড় থেকে তাকালেই চোখ ধাঁধানো বর্ণিল সবুজ ফসলের সরব উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। তবে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় শ্যালো মেশিন বসিয়ে নদীবক্ষ থেকে পানি তুলে সেচ দিয়েছেন কৃষকেরা। পরিত্যক্ত চরে ফলিয়েছেন সবুজ ফসল। হাতছানি দিচ্ছে এক উজ্জ্বল আগামীর।

পদ্মার কূলঘেষে থাকা প্রায় প্রতিটি বাড়িতে রয়েছে গবাদি পশু। তাছাড়া গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় এসব কৃষক তাদের শত শত গরু-বাছুর নিয়ে এসেছেন চরে। পলি মাটির আস্তরণে জেগে ওঠা ঘাস, বিচালি খাইয়ে তারা গরু গুলোকে লালন করছেন। এক সময়ে পদ্মা নদীর পানির প্রাচুর্য্যতা থাকলেও ক্রমশ তাতে ভাটা পড়েছে। এখন জেগে উঠেছে বিস্তীর্ণ চর।

যেসব ফসলি জমি একদিন বিলীন হয়ে গিয়েছিল সেখানে পুনরায় নতুন করে চোখে পড়ছে ফসলের ক্ষেত। পদ্মা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে জেগে চর ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে। শুধু ফসল কিংবা গো খাদ্য নয়। গোয়ালন্দ উপজেলার কুশাহাটা, বেতকা ও রাখালগাছি এলাকার পদ্মার বুক জুড়ে বিশাল চর জেগে ওঠায় সেখানে গোয়ালন্দ উপজেলা ও রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের শতশত নারী পুরুষ নৌকায় করে এখানে আসে ঘাস কাটতে।

চরে ঘাস কাটতে আসা মনির হোসেন ও রোমেলা আক্তার খোলা কাগজকে জানান, গো খাদ্যের দাম এখন অনেক বেশি। ধানসহ নানা ফসলের চাষাবাদ হচ্ছে চরে , ঘাস বিচালিও রয়েছে প্রচুর। এগুলো টাকা দিয়ে কিনতে হয় না। যে কারণে আমরা নদী পার হয়ে এখানে এসেছি। সারাদিন ঘাসকাটা শেষ হলে সন্ধ্যার আগেই আবার নৌকায় করে বাড়ি ফিরে যাবো।

রোমেলা বেগম বলেন, আগে মানুষের গরু বর্গা পালতাম এখন আমার বাচুরসহ তিনটি গরু। গতবার বাড়ি ঘর দিছি গরু বেচে। দুধের টাকায় খাওয়া দাওয়া চলে। ঘাস এখান থেকেই কেটে নিয়ে যাই। এ ছাড়াও এসব অঞ্চলে কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। নাসির সরদারের পাড়া বিস্তীর্ন চরে বেগুন উঠানো, পেয়াজ তোলা ও টমেটো তোলার মতো কাজ সাধারণত মহিলারাই করছে। করিমন বেগম টমেটো তুলে পালা দিয়েছেন। তাদের সাত বিঘা জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে। বললেন এখানে সবাই কম বেশি চাষ করে তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মহলারা এই কাজগুলো করে থাকেন। চরাঞ্চল হওয়ায় এখানে বাইরের মানুষ জন সেভাবে আসে না। এই বাড়তি আয়ে তাদের পরিবারগুলোতে পরিবেশ হয়েছে। ইদানীং প্রায় বাড়িতেই পাকা ঘর উঠছে পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা এসেছে। পদ্মার চরের কুশাহাটার কৃষক জুলমত হোসেন, হালিম সেক, রহমান সরদার ও করিম সহ অন্যান্যরা জানান, ক্রমশ এ চরটির পরিমাণ বাড়ছে। পলি পড়ে ফসল চাষে উপযোগী হচ্ছে তাদের এসব জমি। প্রায় তিনযুগ আগে তাদের পূর্ব পুরুষের জমিতে তারা নতুন উদ্যমে চাষ শুরু করেছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে এক সময় পদ্মা নদীর চরের অর্থনীতি পাল্টে যাবে। সে লক্ষ্যেই আবারও ঘুরে দাঁড়াতে চাইছেন নদীভাঙা মানুষগুলো।

এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনজুরুল ইসলাম বলেন প্রতিবছর বর্ষার পানিতে চরাঞ্চল ডুবে যায় ফলে মাঠে পলি পরে এই কারণে সেখানে ফসল ভালো হচ্ছে। বিশেষ করে শীতের শাকসবজি চাষ করে তারা লাভবান হচ্ছে এবং উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তাদেরকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে সহায়তা করা হচ্ছে।

সর্বশেষ পোষ্ট

এই ধরনের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here