সংক্ষিপ্ত স্কোর :সিলেট সানরাইজার্স : ১৮৫/৬, ২০ ওভার (বোপারা ৪৪, সিমন্স ৪৩, মৃত্যুঞ্জয় ৩/৩৬)।
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স : ১৮৮/৬, ১৯.১ ওভার (জ্যাকস ৯১*, ওয়ালটন ৩৫, সোহাগ ২/২১)।
ফল : চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ৪ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : উইল জ্যাকস (চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স)।
ওপেনার উইল জ্যাকসের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে তৃতীয় দল হিসেবে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) প্লে-অফ নিশ্চিত করলো চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স।
ইংলিশ জ্যাকসের অনবদ্য ৯১ রানের সুবাদে আজ লিগ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে চট্টগ্রাম ৪ উইকেটে হারিয়েছে সিলেট সানরাইজার্সকে।
এই জয়ে ১০ খেলায় ১০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয় স্থানে উঠলো চট্টগ্রাম। সমানসংখ্যক ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থস্থানে মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা। আর ৯ খেলায় ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের পঞ্চমস্থানে খুলনা টাইগার্স।
আজ সন্ধ্যায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে হারালে শেষ দল হিসেবে প্লে-অফে খেলবে খুলনা। আর খুলনা হারলে, প্লে-অফে খেলবে ঢাকা। আগেই কুমিল্লা ও ফরচুন বরিশাল প্লে-অফ নিশ্চিত করেছে।
লিগ পর্বে শেষ ম্যাচ হেরে ১০ খেলা শেষে ৩ পয়েন্ট নিয়ে এবারের বিপিএল শেষ করলো সিলেট।
টুর্নামেন্টের ২৯তম ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৮৫ রান করে সিলেট। জবাবে ৫ বল বাকী রেখে জয়ের স্বাদ পায় চট্টগ্রাম।
জিতলেই প্লে-অফ নিশ্চিত, এমন সমীকরণকে মাথায় নিয়ে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিলেট সানরাইজার্সের মুখোমুখি হয় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। টস জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্বান্ত নেন চট্টগ্রামের অধিনায়ক আফিফ হোসেন।
প্লে-অফে খেলার আশা আগেই শেষ হওয়া সিলেট, প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালোই পেয়েছিলো। ২৯ বলে উদ্বোধনী জুটিতে ৪১ রান তোলেন সিলেটের দুই ওপেনার দক্ষিণ আফ্রিকার কলিন ইনগ্রাম ও এনামুল হক বিজয়।
আগের দুই ম্যাচে ৯০ ও ৮৯ রান করা ইনগ্রাম, আজ প্রথম চার ওভারে ২টি ছক্কা ও ১টি চার মারেন। বিজয় ১টি করে চার-ছক্কা মারেন।
পঞ্চম ওভারের পঞ্চম বলে স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজের বলে বোল্ড হন বড় ইনিংসের আভাস দিয়ে ১৯ বলে ২৪ রান করা ইনগ্রাম।
ইনগ্রামের বিদায়ের পর ক্রিজে এসেছিলেন মিজানুর রহমান। তিন বল খেলে মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরির প্রথম শিকার হয়ে শুন্য হাতে বিদায় নেন মিজানুর।
৪৬ রানে ২ উইকেট পতনের পর সিলেটের হাল ধরেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের লেন্ডন সিমন্স ও বিজয়। রানের গতি বাড়িয়ে ১০ ওভার শেষে দলকে ৭৮ রান এনে দেন বিজয় ও সিমন্স। ১১তম ওভারে শরিফুল ইসলামের বলে ২টি ছক্কা মারেন সিমন্স। ১২তম ওভারেই ১শতে পৌঁছে যায় সিলেটের রান।
বিজয়-সিমন্সের জমে যাওয়া জুটিতে কপালে চিন্তার ভাঁজ চট্টগ্রামের। তবে ১৩তম ওভারের প্রথম বলেই চট্টগ্রামকে দারুন এক ব্রেক-থ্রু এনে দেন এবারের আসরের একমাত্র হ্যাট্টিকম্যান মৃত্যুঞ্জয়। জমে যাওয়া বিজয়-সিমন্সের জুটি ভাঙ্গেন তিনি।
ব্যাক স্কয়ারে বেনি হাওয়েলকে ক্যাচ দিয়ে থামেন মারমুখী মেজাজে থাকা সিমন্স। ২৭ বল খেলে ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪২ রান করেন তিনি। তৃতীয় উইকেটে বিজয়-সিমন্স ৩৮ বলে ৫৫ রানের জুটি গড়েন।
সিমেন্সর শিকারের ওভারেই চট্টগ্রামকে আবারও উইকেট শিকারের আনন্দে মাতান মৃত্যুঞ্জয়। চতুর্থ বলে বিজয়ের উইকেট উপড়ে ফেলেন মৃত্যুঞ্জয়। বোল্ড হবার আগে ২৬ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কা হাঁকান বিজয়। ৩২ রান করেন তিনি।
চার বলের ব্যবধানে দুই সেট ব্যাটারকে হারানোর পর ভড়কে যায়নি সিলেট। উইকেটে নতুন দুই ব্যাটার অধিনায়ক ইংল্যান্ডের রবি বোপার ও মোসাদ্দেক হোসেন শেষ দিকে ব্যাট হাতে ঝড় তুলেন। মিরাজের ১৭তম ওভারে ১টি করে চার-ছক্কা মারেন মোসাদ্দেক। পরের ওভারের প্রথম দুই বলেই হাওয়েলকে দু’টি ছক্কা মারেন বোপারা। পরে আরও একটি চারে, ঐ ওভার থেকে ২১ রান পায় সিলেট। মৃত্যুঞ্জয়ের ১৯তম ওভারে ১টি করে চার-ছক্কায় ১৫ রান পেয়ে যায় সিলেট। একই ওভারে ক্যাচ দিয়ে জীবনও পান বোপারা।
শরিফুলের করা শেষ ওভারের প্রথম দুই বলে ১টি করে চার-ছক্কা আদায় করেন বোপার। তবে তৃতীয় বলে বিদায় ঘটে তার। ২১ বলের ইনিংসে ৪টি ছক্কা ও ২টি চারে ৪৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন বোপারা।
শেষ ওভারের শুরুটা ভালো হলেও, শেষ ৩ বলে মাত্র ২ রান পায় সিলেট। এতে ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৮৫ রান পর্যন্ত যেতে পারে সিলেট। শেষ ৪ ওভারে ৬১ রান পায় তারা। পঞ্চম উইকেট জুটিতে বোপারা-মোসাদ্দেক ৪১ বলে ৮০ রান যোগ করেন।
২২ বলে ৩৫ রানে অপরাজিত থাকেন মোসাদ্দেক। তার ইনিংসে ৩টি চার ও ২টি ছক্কা ছিলো। চট্টগ্রামের মৃত্যুঞ্জয় ৩৬ রানে ৩ উইকেট নেন।
টার্গেট ১৮৬ রান স্পর্শ করতে পারলেই প্লে-অফ নিশ্চিত চট্টগ্রামের। এমন লক্ষ্যে খেলতে নেমে তৃতীয় ওভারে প্রথম উইকেট হারায় চট্টগ্রাম। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ইনিংস শুরু করা ওপেনার জাকির হাসানকে থামান সিলেটের স্পিনার সোহাগ গাজী। ৯ বলে ১৭ রান করেন জাকির।
কিছুক্ষণ বাদে চট্টগ্রামকে দ্বিতীয় ধাক্কা দেন সোহাগই। অধিনায়ক আফিফকে ব্যাট হাতে বড় ইনিংস খেলতে দেননি সোহাগ। ৭ বলে ৭ রান করে ফিরেন আফিফ। এতে ৩৯ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে চট্টগ্রাম।
সেখান থেকে সিলেটের বোলারদের উপর কাউন্টার অ্যাটাক করেন দুই বিদেশি উইল জ্যাকস ও চাঁদউইক ওয়ালটন। ওপেনার ইংল্যান্ডের জ্যাকস ষষ্ঠ ওভারে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ২১ রান তোলেন।
অন্যপ্রান্তে রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওয়ালটনও। ১২তম ওভারে সিলেটের লেগ-স্পিনার জুবায়ের হোসেনের বলে পরপর দু’টি ছক্কা মারেন ওয়ালটন। কিন্তু ঐ ওভারেই রান আউট হন একবার জীবন পাওয়া ওয়ালটন। অবসান ঘটে তিনটি চার ও দুইটি ছক্কায় ২৩ বলে ৩৫ রানের ঝড়ো ইনিংসের। তবে আউট হওয়ার আগে তৃতীয় উইকেটে জ্যাকসের সাথে ৪১ বলে ৬৯ রানের জুটি গড়ে দলকে লড়াইয়ে রাখেন ওয়ালটন।
এরপর হাওয়েলকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন জ্যাকস। বেশি দূর যেতে না পারলেও চতুর্থ উইকেটে ২৩ বলে ৩৫ রান দলকে উপহার দেয় এ জুটি। ৩৫ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ১২তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। সাবধানে খেলতে থাকা, হাওয়েল পরবর্তীতে ৮ রানে বিদায় নেন। তাকে শিকার করেন আলাউদ্দিন বাবু।
হাওয়েল যখন ফিরেন তখন ২৭ বলে ৪৩ রানের সমীকরণ চট্টগ্রামের সামনে। ১৭তম ওভারে ৩টি চারে ১৪ রান তুলেন জ্যাকস ও শামিম হোসেন। পরের ওভারের প্রথম বলে চার মেরে বাবুর দ্বিতীয় ডেলিভারিতে থামেন শামিম। ৭ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ২১ রান করেন তিনি। পঞ্চম উইকেটে জ্যাকস-শামিম ১১ বলে গুরুত্বপূর্ণ ২৮ রানে জয়ের পথ সহজ হয়ে যায় চট্টগ্রামের।
শেষ ২ ওভারে ১৩ রানের প্রয়োজন পড়ে চট্টগ্রামের। ১৯তম ওভারে ১ উইকেটে হারিয়ে ৯ রান পায় চট্টগ্রাম। আর শেষ ওভারের প্রথম বলে ছক্কা মেরে চট্টগ্রামের জয় নিশ্চিত করেন ম্যাচ সেরা জ্যাকস।
৫৭ বলে ম্যাচ জয়ী অনবদ্য ৯১ রান করেন জ্যাকস। তার ইনিংসে ৮টি চার ও ৪টি ছক্কা ছিলো। সিলেটের সোহাগ-বাবু ২টি করে উইকেট নেন।