- পাকিস্তানকে হারিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথম জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল।
অভিষেক বিশ্বকাপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে আজ বাংলাদেশ ৯ রানে হারিয়েছে উপমহাদেশের দল পাকিস্তানকে। পুরুষ বিশ্বকাপেও নিজেদের প্রথম আসরে পাকিস্তানকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ।
এবারের আসরে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে যথাক্রমে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ৩২ রানে ও নিউজিল্যান্ডের কাছে ৯ উইকেটে হেরেছিলো বাংলাদেশ।
নিজেদের অভিষেক বিশ্বকাপ প্রথম জয়ের সন্ধানে হ্যামিল্টনে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। টস জিতে বাংলাদেশকে প্রথমে ব্যাটিংয়ে পাঠায় পাকিস্তান। ব্যাট হাতে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার শামিমা সুলতানা ও শারমিন আকতার। ৮ দশমিক ৫ ওভারে ৩৭ রানের জুটি গড়েন তারা। ৩০ বলে ১৭ রান করে বিদায় নেন সুলতানা।
তিন নম্বরে নেমে ক্রিজে শারমিনের সঙ্গী হন ফারজানা হক। জুটিতে ৪২ রান যোগ হবার পর আউট হন শারমিন। ৬টি চারে ৫৫ বলে ৪৪ রান করেন তিনি।
৭৯ রানে দ্বিতীয় উইকেট পতনের পর বাংলাদেশকে বড় স্কোরের ভীত গড়ে দেন ফারজানা ও অধিনায়ক নিগার সুলতানা। উইকেটে সেট হতে সময় নিলেও, পরবর্তীতে রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন তারা। দু’জনের ব্যাটিং দৃঢ়তায় ৩৭ ওভারে দেড়শ রান পায় বাংলাদেশ। ৩৮তম ওভারে ব্যক্তিগত হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ফারজানা। ৮৯ বলে ৪৪ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে নবম অর্ধশতকের দেখা পান তিনি। গত ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫২ রান করেছিলেন ফারজানা।
ফারজানার হাফ-সেঞ্চুরির পর থামতে হয় নিগারকে। হাফ-সেঞ্চুরি থেকে ৪ রান দূরে থাকতে বিদায় নেন তিনি। ৬৪ বল খেলে মাত্র ১টি চারে ৪৬ রান করেন নিগার। তৃতীয় উইকেটে ফারজানার সাথে ১২৪ বলে ৯৬ রান যোগ করেন নিগার।
পাঁচ নম্বরে নামা রুমানা আহমেদকে নিয়ে দলের স্কোর ২শ পার করেন ফারজানা। এরপরই ৯ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারিয়ে শেষদিকে দ্রুত রান তোলার পথে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। এসময় রুমানা ১৬, ফারজানা ৭১ ও ফাহিমা খাতুন খালি হাতে ফিরেন। ১১৫ বল খেলে ৫টি চারে নিজের ইনিংস সাজান ফারজানা। এটিই তার ওয়ানডে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচেও ৭১ রান করেছিলেন ফারজানা।
ইনিংসের শেষদিকে চাপে পড়লেও, রিতু মনি ও সালমা খাতুনের ১১ রানের দু’টি ছোট ইনিংসে ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৩৪ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। পাকিস্তানের নাশরা সান্ধু ৪১ রানে ৩ উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ২৩৫ রানের টার্গেট খেলতে নেমে শুরুতে বোংলাদেশী বোলারদের পাত্তাই দেয়নি পাকিস্তানী ব্যাটাররা। পাকিস্তানের ওপেনিং জুটির সামনে অসহায় ছিলো বাংলাদেশের বোলাররা। তবে ২৪তম ওভারে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন ডান-হাতি স্পিনার রুমানা আহমেদ। দলীয় ৯১ রানে পাকিস্তানের জুটি ভাঙ্গেন রুমানা। ৪৩ রান করে ফিরেন নাহিদা খান।
এরপর পাকিস্তানের স্কোর ১৫৫ রানে নিয়ে যান পাকিস্তানের ওপেনার সিদরা আমিন ও অধিনায়ক বিসমাহ মারুফ। তখন জয় পেতে ৭৩ বলে ৮০ রানের দরকার ছিলো পাকিস্তানের।
দলীয় ১৫৫ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় পাকিস্তান। আর ৪১ দশমিক ৫ ওভারে ২ উইকেট ১৮৩ রান তুলেছিলো পাকিস্তান। তখন ৪৯ বলে ৫২ রানের সমীকরন দাঁড় করায় পাকিস্তান। তবে এরপরই বল হাতে জ¦লে উঠেন বাংলাদেশের বোলাররা। ৪২তম ওভারের শেষ বলে ফাহিমা খাতুন পাকিস্তানের তৃতীয় উইকেট তুলে নেন। পরের ওভারে পাকিস্তানের পঞ্চম উইকেটের পতন ঘটান রুমানা। ১৮৫ রানে ৪ উইকেট পতনের পরও ম্যাচে ছিলো পাকিস্তান।
কিন্তু ৪৪তম ওভারে পাকিস্তানের তিন উইকেটের পতন ঘটে। ঐ ওভারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে উইকেট নেন ফাহিমা। আর শেষ বলে রান আউটে সপ্তম উইকেট হারায় পাকিস্তান। এতে ৭ উইকেটে ১৮৮ রানে পরিণত হয় পাকিস্তান।
দলের এই বিপদের মাঝে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন সিদরা। ৪৮ ওভারের মধ্যে সিদরাসহ আরও ২ উইকেট হারায় পাকিস্তান। ১৪০ বলে ১০৪ রান করেন ওপেনার সিদরা। শেষ দুই ওভারে ১৯ রানের প্রয়োজন মেটাতে পারেনি পাকিস্তান। ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২২৫ রান করে তারা। ফলে ঐতিহাসিক জয়ের স্বাদ নেয় বাংলাদেশ। বল হাতে বাংলাদেশের ফাহিমা ৮ ওভারে ৩৮ রানে ৩টি ও রুমানা ৭ ওভারে ২৯ রানে ২ উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন ফাহিমা।
আগামী ১৮ মার্চ বিশ্বকাপে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ নারী দল।