Saturday, July 27, 2024

শ্বাসরোধ করে হত্যার পর স্ত্রীকে সেফটি ট্যাংকের ভিতর লাশ ঢেকে থানায় নিখোঁজের অভিযোগ : গ্রেফতার -২

এস এম রাহাত হোসেন ফারুক: রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে চাঞ্চল্যকর গৃহবধূ মিনু বেগম হত্যার রহস্য উদঘাটন ও স্বামী উজ্জল শেখ , শাশুড়ী জহুরা বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ।

মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় রাজবাড়ী পুলিশ সুপারের কনফারেন্স রুমে প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার জি. এম. আবুল কালাম আজাদ মিনু হত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করেন।

পুলিশ সুপার বলেন, বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের তেতুলিয়া গ্রামের মিনু বেগম (২৭) সাথে ১০ বছর পূর্বে তার আপন চাচাতো ভাই একই গ্রামের মোঃ কুদ্দুস শেখের ছেলে উজ্জ্বল শেখ (৩০) সাথে পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়। মিনু বেগমের স্বামী উজ্জল শেখ মধুখালী একটি পাটকলে শ্রমিকের কাজ করে। বিবাহের পর মিনু বেগমের গর্ভে সন্তান না আসায় তার স্বামী উজ্জল শেখ দ্বিতীয় বিবাহ করে। মিনু বেগমের গর্ভে সন্তান না আসায় আসামীরা মিনু বেগমকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো। গত ৫ আগস্ট রাতে মিনু বেগমের স্বামী উজ্জল শেখ কর্মস্থল হতে বাড়ীতে আসে এবং স্ত্রীর সাথে মোবাইল নিয়ে ঝগড়া হয়। ঝগড়ার একপর্যায়ে উজ্জল শেখ তার প্রথম স্ত্রী মিনু বেগমকে গলা টিপে হত্যা করে। পরে পাশের রুমে তার মা-বাবা ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রী এবং নানী শাশুড়ীকে ডেকে তোলে। তারা মিনু বেগমের মাথায় পানি ঢালে, কিন্তু ততক্ষণে মিনু বেগম আর বেঁচে নেই।

পুলিশ সুপার বলেন, যখন দেখে মিনু বেগম আর বেঁচে নেই তখন ছেলেকে আইনের হাত থেকে বাঁচাতে উজ্জলের বাবা তাদের বাড়ির টয়লেটের সেপটিক ট্যাংকের ভেতর লাশ গুম করার পরিকল্পনা করে। সে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে স্বামী উজ্জল শেখ, শ্বশুর মোঃ কুদ্দুস শেখ ও শাশুড়ি জোহরা বেগম লাশটিকে তাদের টয়লেটের সেফটিক ট্যাংকের ভেতর ফেলে দেয়। সেপটিক ট্যাংকের স্লাবটিও আটকিয়ে দেয়। শশুর পুত্রবধূ মিনু বেগমকে তারা যে হত্যা করল এটা যেন কেউ সন্দেহ না করতে পারে এর জন্য তারা বালিয়াকান্দি থানায় মিনু বেগম নিখোঁজ সংক্রান্তে একটি অভিযোগ করে এবং অন্যান্যদের কাছে রটিয়ে দেয় মিনু বেগমের সাথে অপর একজনের অবৈধ সম্পর্ক ছিল এই জন্য সে বাড়ী হতে অন্যত্র পালিয়ে গেছে। উক্ত বিষয়টি নিয়ে মিনু বেগমের মা গত ৮ আগস্ট বালিয়াকান্দি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পরে গত ১৯ আগস্ট আসামী উজ্জল শেখের বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে পচা গন্ধ বের হলে প্রতিবেশীরা পুলিশকে সংবাদ দিলে বালিয়াকান্দি থানা পুলিশ ঘটনাগুলে উপস্থিত হয়ে সেপটিক টাংকের ভেতর থেকে গৃহবধূ মিনুর পচাগলা লাশ উদ্ধার করে। থানা পুলিশ মৃত দেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে লাশ ময়না তদন্তের জন্য রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন। পরে মিনুর মা বাদী হয়ে থানায় বালিয়াকান্দি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
রাজবাড়ী পুলিশ সুপার জি. এম. আবুল কালাম আজাদ বলেন, পাংশা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সুমন কুমার সাহার সার্বিক তত্ত্বাবধানে বালিয়াকান্দি থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে বালিয়াকান্দি থানার একটি চৌকস পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামীদের গ্রেপ্তার এবং হত্যার মূল রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য চেষ্টা করে। এ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে অন্যতম আসামী জহুরা বেগম কে পুলিশ গ্রেফতার করে, আগের দিন ফরিদপুর র‍্যাব-১০ তার ছেলে উজ্জল শেখকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। গ্রেপ্তারকৃত আসামী প্রাথমিকভাবে অন্যান্য আসামীসহ এ হত্যাকান্ডে জড়িত থাকায় কথা স্বীকার করে।
এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন নিহতের ননদ কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে । ‘

পুলিশ সুপার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং এ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রেজাউল করীম, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) সুমন কুমার সাহা , ডি আইও ওয়ান বিপ্লব কুমার সহ স্থানীয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন ।

সর্বশেষ পোষ্ট

এই ধরনের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here