স্টাফ রিপোর্টারঃ তিল খেতেই উপুড় হয়ে পড়েছিলো মরদেহ, কালো হয়েছিলো মুখ আর শরীর। মৃত্যুর একদিন পর ২১শে মে (মঙ্গলবার) রাজবাড়ী সদর উপজেলার মূলঘর ইউনিয়নের পারসাদিপুর গ্রামের লুতফর রহমান (৪০) নামে এক শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করেছে রাজবাড়ী সদর থানা পুলিশ ।
সরেজমিনে জানাগেছে,জেলা সদরের মূলঘরের ৪নং ওয়ার্ডে লুতফর রহমান তার স্ত্রী শারমিন ও মা একসাথে থাকতেন । কৃষিকাজের পাশাপাশি অন্যের জমিতেও কাজ করতেন ।
গত ২০শে মে সকাল ৭টার দিকে পাশের বসন্তপুর ইউনিয়নের কোলা সদর উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে ফখরুদ্দীনের তিলের খেতে তিল কাটার চুক্তি নেয় লুতফর। মুঠোফোনেই তার সাথে ফখরুদ্দিনের চুক্তি হয়।
লুতফরের স্ত্রী জানান, সকাল ৭টায় বাড়ী থেকে বের হয় তার স্বামী আর ফেরেন না , সন্ধ্যার পর থেকেই চিন্তিত। পরদিন এদিকে উপজেলা নির্বাচন কাউকে পাইনা খোঁজখবর নেওয়ার জন্য পরে সকালে মাইকিং করা হয় ,পরে ফখরুদ্দিনের তিলখেতে সকাল ৯টার দিকে লাশ পাওয়া যায় আমার স্বামীর । বিয়ের ২৫বছরে অনেক চেষ্টা করে এখন আমার পেটে বাচ্চা এসেছে আমার স্বামী মারা গেলো । এ শোক সইতে পারার না । এর আগেও ২টা সন্তান নষ্ট হইছে ।পেটের বাচ্চা আলোর মুখ দেখার আগেই স্বামী মারা গেলো।
লুতফরের মামাত ভাই নুরুল ইসলাম বলেন, আমরা কেউ জানিনা যে, ভাই কোথায় কাজে গেছে। সন্ধায় ভাবী আমাকে বলল ভাই আসেনি। বৃষ্টির মধ্যে কোথাও আছে হয়তো পরে আসবে এমনটা বলি ভাবিকে। কিন্তু তার ফিরে না আসায় মাইকিং করা হয় । পরে শুনি কোল স্কুলের পাশে ফখরুদ্দিনের তিলের খেতে ভাইয়ের লাশ পড়ে আছে । সেখানে গিয়ে দেখি তার শরীর উপুড় হয়ে পড়ে আছে। তার মুখ কালো হয়ে গেছে পকেটে থাকা মোবাইল পুড়ে গেছে। পরে পুলিশ কে ফোন করা হয় । পুলিশ এসে লাশ নিয়ে যায় । পোষ্ট মর্টেমের পর লাশ দাফন করা হয়েছে। স্থানীয়দের ধারণা বৃষ্টির সময় বজ্রপাতে ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে।
নিহতের ছোট ভাই লাভলু বিশ্বাস জানান, আমার ভাই খুব সরল সহজ ছিলো কারো সাথে কোন শত্রুতা ছিলনা। তিল খেতে তার মরদেহ পাওয়া যায়। বজ্রপাত কিনা জানিনা। বিষয়টি সঠিক তদন্ত হলে বেরিয়ে আসতো ।
এ বিষয়ে খেতের মালিক ফখরুদ্দিনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, নিহত লুতফর কে দিয়ে এর আগেও কাজ করিয়েছি। তার মোবাইল নাম্বার আমার মোবাইলে সেইভ করা ,৬শত টাকার বিনিমিয়ে চুক্তি করি খেতের তিল কেটে দিতে। ওই দিন সকাল ১০টার দিকে আমি তাকে খাবার দিতে যাই। সে খাবার খায়, মেঘ মেঘ ভাব দেখে আমি চলে আসি। এর পর আমি আর কিছুই জানিনা । পরে শুনি সে মারা গেছে। সে আমার জমির মধ্যে মারা যায় নাই,অন্য জমিতে মরে পড়ে আছে ,অনেকেই বলছিলো স্ট্রোক করে মারা গেছে, পরে থানা পুলিশ আসলে লাশের উপুড় করলে দেখি মুখে কালো দাগ , পরে বুঝতে পারি বজ্রপাতে মারা গেছে। পুলিশ পড়ে লাশ নিয়ে গেছে।
স্থানীয় কুদ্দুস মোল্লা জানান, তিল খেতের পাশেই আমি ঘাস কাটতেছিলাম। দেখলাম আমার বেয়াই ফখরুদ্দিন ভাত নিয়ে আসছে । ভাত খাবার পর আমার ঘাস এর বোঝা মাথায় উঠায় দিয়েছে লুতফর পরে তিল কাটতে শুরু করে ,তখন ১১ টার মত বাজে। তখন কোন বৃষ্টি ছিলনা ।
এ বিষয়ে স্থানীয়রা জানান, একজন লোক যদি অন্যের জমিতে কাজ করে তাহলে কাজ কতদূর হচ্ছে কেমন হচ্ছে ,সেটা জমির মালিক খোঁজ খবর নেয়। এখানে জমির মালিক সেই লোকটার কোন খবরই নিলেন না ,কাজের ই খবর নিলেন না বিষয়টি বেমানান। একদিন পর জমির উপর সেই লোকের লাশ পাওয়া গেলো তার পরিবারের কাছে খোঁজখবর দেওয়া দরকার ছিলো। কিন্তু এলাকায় মাইকিং পর্যন্ত করা হলো অথচ জমির মালিক জানেন ই না লোকটি মারা গেছে। বজ্রপাতে কেউ আহত হলে হাঁসপাতালে নিলে বেঁচেও যেতে পারতো ।লোকটির স্ত্রী অন্তস্বত্তা ,তার কি উপায় হবে । জমির মালিকের অবহেলা তো এখানে দেখাই যায় ।
এ বিষয়ে রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইফতেখার আলম প্রধান বলেন, মরদেহ পোষ্ট মর্টেম করা হয়েছে । বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে । ‘