- রাজবাড়ী সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউপি’র ৭ নং ওয়ার্ডের দক্ষিন মাটিপাড়া এলাকার হাসেম মণ্ডলের ছেলে জাকির মণ্ডল (৪২) নামে এক শ্রমিক। জানাগেছে অভিমান করে ঘরে থাকা কীটনাশক খেয়ে তার মৃত্যু হয়। আপন (১১) নামে একটি ছেলে ও স্ত্রী রেখে সে মারা যায়।
পারিবারিক সূত্রে জানাগেছে, ২৭শে সেপ্টেম্বর (সোমবার) আনুমানিক রাত ৯ টার দিকে ঘুমানোর আগে সে কীটনাশক খায় ,পরে স্ত্রী হাফিজা তা টের পেয়ে ডাক-চিতকার করলে পরিবারের লোকজন তাকে রাজবাড়ী সদর হাঁসপাতাল ও পরে ফরিদপুর মেডিক্যাল হাঁসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিতস্যাধীন অবস্থায় রাত আনুমানিক ১১ টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
তবে কি কারনে জাকির মণ্ডল আত্নহত্যা করেছে তা কেউ বলতে পারেনি। এ বিষয়ে জাকিরের স্ত্রী হাফিজা জানান,তার স্বামী দীর্ঘদিন পেটের বেথায় ভুগছিলো,সে কারনে হয়তো আত্নহত্যা করেছে।
নিহত জাকিরের বাবা, হাসেম মণ্ডলে জানান, তার কোন সমস্যাই ছিলোনা। আজ ৪২ দিন হলো তার মা মারা গেছে, সে কারনে জাকির ও তার স্ত্রী আমার বাড়ীতে থাকে । আমার ৫ ছেলে ,২জন বিদেশ থাকে ৩জন এলাকাতে থাকে। বড় ছেলে আলাদা । তাদের অন্য ৪ ভাইয়ের নামে একটি বাড়ী করে দিয়েছি। আমার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর আমি আমার বাড়ী একা থাকি তাই জাকির ও তার স্ত্রী ছেলে আমার বাড়ীতে থাকে,আর ছোট ছেলে ছালাম মন্ডল তার স্ত্রী নিয়ে চার ভাইয়ের জন্য যে ঘর করে দিয়েছি সেখানে থাকে। রাতে ঘুমানোর জন্য গেলো ভালো মানুষ ,হটাত শুনি তার স্ত্রীর ডাক চিৎকার ,পরে তাকে হাঁসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ‘ তার ছেলে জাকির দীর্ঘদিনের পেটের বেথা বা অন্যকোন রোগে আক্রান্ত ছিলো কি-না ? জানতে চাইলে তিনি জানান, তেমন কোন বড় ধরনের অসুখ তার ছিলোনা , তবে জ্বর ছিলো শুনেছিলাম।
নিহত জাকিরের ভায়রা তোজাহার জানান, আমার ভায়রা জাকির মন্ডল অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলো। রাতে শুনলাম এ ঘটনা পরে আমি এম্বুলেঞ্চে করে ফরিদপুরে যাই। সেখানে চিকিতস্যাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। আমার সাথে তার সম্পর্ক ছিলো খুব গভীর । কিন্তু সে কখনো অসুস্থ্যতার কথা আমাকে যানায় নি। সব কথা ই আমাকে সে জানায়, কিন্ত এ ধরনের কথা সে আমাকে জানায় নি।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানাগেছে, নিহত জাকির মন্ডলের বাবা তাদের চার ভাইয়ের নামে যে বিল্ডিং ঘর বানিয়ে দিয়েছিলো সেখানে তার ছোট ভাই ছালাম মন্ডল বিল্ডিং ঘেষে রান্না ঘর তুলছিলো সে সময় জাকির মন্ডল রান্না ঘরের কারনে বিল্ডিঙের ক্ষতি হতে পারে মনে করে তার ছোট ভাই ছালাম মণ্ডল কে বাধা দিয়েছিলো। এ নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে কোন্দল চলছিলো। অন্য দিকে জাকির মণ্ডলের বাবার সাথে জমিজমা নিয়ে মনোমালিন্য চলছিলো।
নিহত জাকিরের চাচাতো বড় ভাই ইমান আলী জানান, সে খুব ভালো লোক ছিলো ,কখনো কারো সাথে খারাপ কথা বলে নাই,কারো সাথে কোন দ্বন্দ ছিলো না। ১০-১২ দিন আগে রান্না ঘর উঠানো নিয়ে তার ছোট ভাই ছালাম মণ্ডলের সাথে ঝামেলা হয়েছিলো,কিন্তু এ কারনে আত্নহত্যা করার কারন হতে পারেন।
এলাকায় খোজ নিয়ে জানা গেছে, নিহত জাকির মণ্ডল কবিরাজি করতো । পাশাপাশি রাজ মিস্ত্রীর কাজ সহ বিভিন্ন শ্রমের কাজ করতো। বাইরে কারো সাথে কোণ দ্বন্দ ছিলোনা। সাদাসিদে স্বভাবের ছিলো।
পাশের দোকানদার বাকাউল স্টোরের মালিক বাকাউল জানান,যেদিন বিষ খেলো সে রাতেও আমার দোকান থেকে আজিজ বিড়ি নিয়ে গেছে ,সে আজিজ বিড়ি খেত। এ এলাকায় কোন দোকানদার আজিজ বিড়ি বিক্রি করতোনা ।তাই আমার দোকান থেকে সে আজিজ বিড়ি নিয়ে বাড়ী গেছে ,তা মুখে তেমন কোন কিছুর ছাপ দেখলাম না, হাসিখুশি ভালো মানূষ বাড়ী গেলো।পরে শুনি এ ঘটনা।
নিহত জাকির মণ্ডলের বাড়ীতে মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখা যায় আত্নীয়-স্বজন সহ পাড়ার অনেক মানুষ। উঠানে তার মরদেহ পরে আছে, স্ত্রীর কান্না করতে করতে অসুস্থ হয়ে পরেছে। পরে থানা পুলিশের এস আই সনাতন মণ্ডল সে বাড়ীতে গিয়ে মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য নিহত জাকির মণ্ডলের লাশ নিয়ে যান।
এ বিষয়ে রাজবাড়ী সদর থানার এস আই সনাতন মণ্ডল জানান, মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় রাজবাড়ী সদর থানায় একটি অপ মৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নং-৫৬ ।