উজ্জল হোসেন, পাংশা : রাজবাড়ীর পাংশায় বাহাদুরপুর ইউনিয়নের পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত হেনা পার্ক একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র । আগেথেকেই এই নদীর তীর এলাকায় ঈদ-পূজা সহ বিভিন্ন উৎসবের সময় ভ্রমণ পিয়াসুদের ভীড় লক্ষ করা যেত। কয়েক মাস আগে হেনা পার্কের পাশাপাশি পিন্টু-মিন্টু পার্ক নামে আরও একটি বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে এই নদীর তীর এলাকায়। সেই সাথে ঈদ-পূজা ও বিভিন্ন উৎসব ছাড়াও প্রায়ই বিকাল হলেই ভ্রমণ পিয়াসুদের ভীড় লক্ষ করা যায় এই নদী এলাকায়। পার্ক এলাকার স্বনিকটে নদীর চর জাগায় নৌকা ভ্রমণও বেড়েছে।
সম্প্রতি ইউনিয়নের বকশিপুর এলাকায় একটি মোরটসাইলে দুর্ঘটনায় এক কিশোরের মৃত্যু ও এক কিশোরী আহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে জনমনে রহস্যের সৃষ্টি হয়। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার পরপরই বিভিন্ন মহল থেকে জানা যায়, নিহত কিশোর ও আহত কিশোরী একই সাথে বাহাদুরপুর হেনা পার্কে ঘুরতে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের খপ্পরে পরেছিলেন তাঁরা। এ ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে রয়েছে স্থানীয় ও ভ্রমণ পিয়াসুরা। এই ঘটনার পর থেকে পুলিশের কড়া নজরদারি লক্ষ করা গেছে পার্ক এলাকায়।
জানা যায়, ঘটনার দিন বিকালে ঐ কিশোর-কিশোরী নৌকা যোগে চরে গিয়ে নদীর পাশে বসে থাকে। বিষয়টি দেখে ৬ জন কিশোর নদীর চরে গিয়ে ঐ কিশোর-কিশোরীকে একটি নৌকা যোগে নিয়ে এসে মোটরসাইকেল যোগে পার্ক এরিয়া থেকে তারাপুর মাদ্রাসা সংলগ্ন একটি ইট ভাটায় নিয়ে যায় এবং তাদের কাছে থাকা টাকা, মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। পরে তাদেরকে একটি মোটরসাইকেলে উঠিয়ে বাহাদুরপুরের দিকে নিয়ে যাওয়ার সময় বাহাদুরপুর বাজারে এক পথচারির গায়ে বেধে মোটরসাইকেলটি পড়ে যায়। এ ঘটনায় বাজারের ব্যবসায়ীরা সহ অনেক লোক জড়ো হয়। এ সময় উপস্থিত লোকজনের সামনে ঐ কিশোর-কিশোরী বলেন, তাদেরকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। পরে বিষয়টি বাহাদুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সমাধান করেন বলে জানান বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী।
বাহাদুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সজীব হোসেন জানান, তিনি ইউনিয়ন পরিষদের উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় বাজারে অনেক লোকের জড়োতা দেখে দাড়াই এবং জানতে পারেন এখানে একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। ছেলে মেয়েকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ি পাঠিয়ে দেন তিনি। পরে জানতে পারেন ইউনিয়নের বকশিপুর এলাকায় একটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ছেলেটি মারা গেছে এবং সাথে থাকা মেয়েটি গুরুত্বর আহত হয়। এই ঘটনার আড়ালে অন্য কোন ঘটনা আছে কিনা তিনি জানেন না।
এ সময় পার্ক এলাকার স্থানীয়রা ও একাধিক নৌকার মাঝি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এই এলাকার এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে আশা কয়েক জন কিশোর অনেক দিন ধরে পার্ক এলাকায় ঘুরতে আশা তরুন-তরুনী, যুবক-যুবতী, কিশোর-কিশোরীদের টার্গেট করে। কোন প্রকার দুর্বলতা পেলে তাদের কাছে থাকা টাকা-পয়সা, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এই কিশোরদের একটা গ্রুপ আছে। তারা একটি কিশোর গ্যাং তৈরি করেছে। তারা মাঝে মধ্যেই পার্ক এলাকায় এসে আমাদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এই ভয়ে তাদেরকে কিছু বলতে পারি না। মাঝে মধ্যে পার্ক এরিয়ার আশপাশে তাদেরকে নেশা করতেও দেখা যায়। পার্ক এরিয়ায় পুলিশের টহল জোরদার করার আহবান জানান তারা।
সম্প্রতি এ ঘটনায় গত সোমবার (১০জুলাই) বাহাদুরপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ সদস্যদের পার্ক এরিয়ায় ডিউটি করতে দেখা যায়। তদন্ত কেন্দ্রের এএসআই মিরান জানান, পার্ক এরিয়া সহ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ডিউটি জোরদার করার নির্দেশনা দিয়েছে ওসি স্যার। এ জন্য আজ আমরা পার্ক এরিয়ায় ডিউটি করছি। আজ কাউকে ভ্রমণ করতে আসতে দেখা যায়নি।