রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক স্বাস্থ্যকর্মী ও ওয়ার্ড বয় কে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে কৃষকলীগের নেতার বিরুদ্ধে। ২৮শে অক্টোবর (বৃহস্পতিবার)-২১বেলা পৌনে ১২ টার দিকে এ ঘটনাটি ঘটে।
এ সময় আহত হন (স্যাকমো) চিকিৎসক আশরাফুল ইসলাম ও ওয়ার্ড বয়। সুকুমার। এদের দুইজনের মধ্যে চিকিৎসক স্যাকমো আশরাফুল ইসলাম প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ও ওয়ার্ড বয় সুকুমার কে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
অভিযুক্ত নেতার নাম মাসুদ মোল্লা। তিনি কৃষকলীগ রাজবাড়ী জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। রোগী তাঁর বড় ভাই। রোগীর নাম আলমগীর মোল্লা। পেশায় ঠিকাদার আলমগীর বালিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক।
বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, বুকে ব্যাথা নিয়ে সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন আলমগীর মোল্লা। এসময় তাঁর ভাই মাসুদ মোল্লাসহ আরও ৪-৫জন ব্যক্তি ছিলেন। তাকে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার হয়। এরপর তাঁর ইসিজি করা হয়। ইসিজির রিপোর্ট ভালো না আসায় চিকিৎসক তাকে ফরিদপুর বা ঢাকায় স্থানান্তর করেন। রোগী নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দ্বিতীয়তলা থেকে নেমে যাওয়ার পর মাসুদ মোল্লার নেতৃত্বে জরুরি বিভাগে কর্মরত দুইজনের ওপর হামলা চালানো হয়। তাদের কিলঘুসি মারাসহ টুল ও চেয়ার দিয়ে মারধর করা হয়। এতে তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে লীলাফোলা জখম হয়। সুকুমারের দাঁত নড়ে যায়।
মাসুদ মোল্লা জানান, হাসপাতালের ডাক্তারদের ব্যবহার খুব খারাপ। ডাক্তাররা ডিউটি করার সময় বাজার করতে যায়। আমার ভাইয়ের বুকের ব্যাথা হওয়ায় সুকুমারকে ওষুধ এনে দিতে বলেন। কিন্তু তাঁরা এনে দেয়নি। বিষয়টি জানার পর তাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছে। এখন তাদের বিরুদ্ধে মারধর করার অভিযোগ করা হচ্ছে।
কর্মরত চিকিৎসক(সেকমো) আশরাফুলইসলাম জানান, বুকে ব্যাথা নিয়ে আলমগীর মোল্লা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে আসেন, পরে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। একটা ভিসেট নামে একটা বাইরে থেকে আনার কথা বললে রোগীর লোকজন ওয়ার্ড বয় সুকুমার কে বলে ইনজেকশন নিয়ে আসতে । তখন সুকুমার জানায় এখানে লোক নাই।আপনারা একজন গিয়ে নিয়ে আসুন। আলমগীর মোল্লা নিজেই বলেন তার গ্যাসের সমস্যা আছে পরে তার হাসপাতাল থেকে একটি গ্যাসের ইনজেকশন দেওয়া হয় এবং ভর্তি দেওয়া হয়। পরে মেডিক্যাল অফিসার ডা. অরুনতিয়া সাহা রোগীর ইসিজি রিপোর্ট করাতে বলেন, রিপোর্ট খারাপ হওয়ায় দুপুর ১টা ১০ মিনিটের দিকে ঢাকা বা ফরিদপুর মেডিক্যালে রেফার করেন। তারা যাবার সময় অতর্কিতভাবে আমার ও ওয়ার্ড বয় সুকুমারের উপর হামলা চালায়। শুধু মাত্র ঔষদ এনে না দেওয়ায় তারা আমাদের উপর হামলা করে।
বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, যেহেতু করোনা ভাইরাসের টিকা কার্যক্রম এর ২য় ডোজ শুরু হয়েছে , আমি ওই সময় টিকা কার্যক্রম দেখভালের জন্য বাইরে ছিলাম। মোবাইলে খবর পাই যে আশরাফুল ইসলাম ও সুকুমার কে কারা মেরেছে, পরে এসে বিষয়টি জানতে পেরেছি। বিষয়টি আমার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ, উপজেলা প্রশাসন, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বিষয়টি মৌখিকভাবে জানিয়েছি।’
বালিয়াকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তারিকুজ্জামান বলেন, বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। তবে এবিষয়ে কেউ থানায় কোনো অভিযোগ করে নাই। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে রাজবাড়ী সিভিল সার্জন ডা.ইব্রাহিম টিটন জানান, এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে ,দ্রুত এ বিষয়টি সমাধানের জন্য তারা আশ্বাস দিয়েছেন।