নেহাল আহমেদ: সানন্দা নাগ তার টিফিনের পয়সা জমিয়ে রেখেছে ভাইকে জামা কিনে দিবে ভাই ফোটার দিনে।ছোট ভাই সামনে বিশ্ব কাপ তাই তার দলের জার্সি নেবে।বোন তার ছোট ভাই কে তাই জার্সি কিনে এনেছে।ভাই ফোটা আমাদের পরিবারের নীবিড় বন্ধনের অনুপ্রেরণার প্রতীক।
বিছিন্ন পরিবার থেকে মহা মিলনের আহ্বান।ভাই বোনের অমুল্য সম্পর্কের অবিনাশী স্বারক চিহ্ন। আমাদের সময়ের বিবর্তনে একান্নবর্তী পরিবারের কনসেপ্ট থেকে আমরা অনেক দূরে সরে এসেছি। অথচ এক সময় যৌথ পরিবারকেন্দ্রিক পরিবেশ পারিপার্শ্বিকতা আপনজনদের পরস্পরের সান্নিধ্যে থেকে ফিল করার আবেগ-অনুভূতি বাঙালী সংস্কৃতিরই অংশ ছিল।বাঙালির হাজার বছরের সংস্কৃতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে একান্নবর্তী পরিবার এবং তার নানান অনুসঙ্গ।
একান্নবর্তী পরিবার নিয়ে রচিত হয়েছে হাজারো সাহিত্য, নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র, নাটক সহ নানান অনুষ্ঠান। এই উৎসব বাংলাদেশের আমাদের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। সামাজিক উৎসব, ধর্মীয় উৎসব, সাংস্কৃতিক উৎসব মিলে আমাদের এই উৎসবে বাংলাদেশ। উৎসবকে ঘিরে আমাদের ঐতিহ্য।আমাদের প্রতিটি মাসে প্রতি পার্বনে ছড়িয়ে আছে নানান উৎসব।কখনো ধর্মীয় আচার নীতিতে কখনো রাষ্ট্রীয় রীতিতে ।তেমনি এক ধর্মীয় আচার ভাই ফোটা।ইতিহাস খুজেঁ যে টুকু পাওয়া যায় তা হলো ভাইফোঁটা হিন্দুদের একটি উৎসব। এই উৎসবের পোষাকি নাম ভ্রাতৃদ্বিতীয়া অনুষ্ঠান। কার্তিক মাসের শুক্লাদ্বিতীয়া তিথিতে (কালীপূজার দুই দিন পরে) এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বাঙালি হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, এই উৎসব কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ২য় দিনে উদযাপিত হয়।
মাঝেমধ্যে এটি শুক্লপক্ষের ১ম দিনেও উদযাপিত হয়ে থাকে। পশ্চিম ভারতে এই উৎসব ভাইদুজ নামেও পরিচিত। সেখানে ভ্রাতৃদ্বিতীয়া পাঁচ-দিনব্যাপী দীপাবলি উৎসবের শেষদিন। আবার, মহারাষ্ট্র, গোয়া ও কর্ণাটকে ভাইফোঁটাকে বলে ভাইবিজ। নেপালে ও পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে এই উৎসব পরিচিত ভাইটিকা নামে। সেখানে বিজয়াদশমীর পর এটিই সবচেয়ে বড় উৎসব। এই উৎসবের আরও একটি নাম হল যমদ্বিতীয়া। কথিত আছে, এই দিন মৃত্যুর দেবতা যম তার বোন যমুনার হাতে ফোঁটা নিয়েছিলেন।
অন্য মতে, নরকাসুর নামে এক দৈত্যকে বধ করার পর যখন কৃষ্ণ তার বোন সুভদ্রার কাছে আসেন, তখন সুভদ্রা তার কপালে ফোঁটা দিয়ে তাকে মিষ্টি খেতে দেন। সেই থেকে ভাইফোঁটা উৎসবের প্রচলন হয়। ভাইফোঁটার দিন বোনেরা তাদের ভাইদের কপালে চন্দনের ফোঁটা পরিয়ে দিয়ে ছড়া কেটে ভাইয়ের মঙ্গল কামনা করে। রাখী বন্ধনের মতো এই উৎসবও প্রত্যেক ভাই-বোনের জন্য বিশেষ একটি পর্ব। এই উৎসব ভাই দুজ, ভাই টিকা, যম দ্বিতীয়া নামেও পরিচিত। প্রতি বছর দীপাবলির দুই দিন পর ভাই ফোটা পালিত হয়। বোনেরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে ভাই ফোটার জন্য। এই দিনে বোনেরা তাদের ভাইয়ের দীর্ঘায়ু কামনা করে পূজা করে, তার মঙ্গল কামনা করে এবং তিলক করে।
কথিত আছে, ভাই ফোটার দিন তিলক লাগালে ভাই দীর্ঘায়ুর পাশাপাশি সুখ-সমৃদ্ধির আশীর্বাদও পায়।আমাদের বিছিন্ন হওয়া ক্রমাগত সময়ে ভাই ভোটা একটি হৃদয়ের বন্ধন।কাছাকাছি থাকার অনুপ্রেরণা।