Sunday, November 17, 2024

রাজনৈতিক সংস্কৃতি

নেহাল আহমেদ: কিছুদিন আগেও দেশে রাজনৈতিক নেতারা ছিলেন নমস্য। তাদের কথা, তাদের আশ্বাসকে সাধারণ মানুষ বিশেষ গুরুত্ব দিত। নেতারাও মানুষের বিশ্বাসের মূল্য দিতেন। তারা সামাজিক কর্মকান্ডে গুরুত্বপুর্ন দায়িত্ব পালন করেন।রাজনীতি করা মানুষ মানেই ন্যায় সত্য সুন্দরের উদাহরণ।এখন কোন কোন রাজনীতিবীদদের কারণে সেই ইমেজ মর্যাদা হারিয়ে যাচ্ছে।

এক সংগঠনের লোক বা কর্মিদের অন্য সংগঠনের মানুষ পছন্দ করে না।বিষোদগার এমন পর্যায়ে পৌছেঁ গেছে যে কেহ নাম শোনা বা মুখ দেখা অপবিত্র মনে করেন।অর্থাৎ নেতারা জেনে শুনেই অহরহ যেসব মিথ্যা বক্তৃতা করছেন এর নাম হয়ে গেছে ‘রাজনৈতিক বক্তব্য’। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এমন ছলচাতুরী আগে হতো না।তখনকার রাজনীতিবিদদের জীবন যাপন আর এখনকার জীবন যাপনের মধ্যে অনেক তফাৎ।এখন রাজনীতির পরিচয়ে কেহ কেহ স্বার্থসিদ্ধির পথ হিসাবে বেছেঁ নিয়েছে।দৃর্বৃত্তের আখঁড়া হিসাবে কেহ কেহ রাজনীতিকে ব্যবহার করছে।

এমনবাস্তবতার কারণে এখন তখনকার রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রজন্মের কাছে রূপকথার গল্পে পরিণত হচ্ছে।
বর্তমানের সঙ্গে যা মেলানো খুব কঠিন। তখন রাজনীতিবিদরা ঘরবাড়ী বিক্রি করে মানুষের সেবা করতো। এখন দেখা যায় বিপরীত চিত্র।

এসব বাস্তবতায় এখন মেধাবী প্রজন্ম রাজনীতিবিমুখ হয়ে পড়ছে।ভালো ছেলে মেয়েরা রাজনীতিতে আসতে চায়না। এখন রাজনীতি’ একটি নেতিবাচক শব্দে পরিণত হচ্ছে যেন। নতুন প্রজন্ম দেখে দেখে বুঝতে শিখেছে এখন সরকারি ও বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীর প্রধান কাজ পরস্পরকে কেবল দোষারোপ করা। গণমাধ্যমে, সেমিনার সভা সসমাবেশে প্রতিদিন ক্লান্তিহীন রাজনৈতিক ঝগড়া দেখে-শুনে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিতৃষ্ণা জন্মে গেছে। কিন্তু কোনো পক্ষই এ থেকে বেরোনোর চেষ্টা করছে তেমন মনে হয় না। সচেতন সাধারণ মানুষ সংস্কৃত, আধুনিক, স্মার্ট রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে দৃশ্যপটে দেখতে চায়। জানি না সে প্রত্যাশা পূরণ হবে কিনা।

বাংলাদেশের রাজনীতি ক্রমান্বয়েই কলুষিত হচ্ছে। রাজনীতিতে ময়লা ছোঁড়াছুঁড়ি নিকৃষ্ট পর্যায়ে পৌঁছেছে। অথচ আমাদের অতীতের রাজনীতির ইতিহাস কি এমনই ছিল? মোটেও না। নিকট অতীতেও আমাদের রাজনীতিতে ছিল সৌহার্দ্যপূর্ণ অবস্থান। রাজনীতির মাঠে যাই বলুক কিন্তু রাজনীতিকদের ভিতরে শ্রদ্ধা-ভালোবাসার কমতি ছিল না।অনেকের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কখনো শিষ্টাচার বর্জিত আচরণ দূরে থাক প্রতিহিংসার লেশমাত্র ছিল না।অনেক নেতার জীবন ছিলো আর্দশে গড়া।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে দেশের যারা ক্ষমতায় এসেছে এবং আমাদের শাসন করেছে। তারা আমাদের রাজনীতির সবচেয়ে বড় যে ক্ষতি করেছে তা হলো, বিরোধিতা ও ভিন্নমত দমন করার মানসিকতা এবং তাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিরূপ আচরণ করা।ক্ষমতায় থাকার জন্য নানান পথ বেছেঁ নেয়া।

যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তখন তাদের রাজনৈতিক আর্শিবাদে থাকা বুদ্ধিজীবী,লেখকশিক্ষাবিদ,রাজনৈতিক অঙ্গনে ক্রমেই প্রতিহিংসা, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা ও গুম খুনের মতো ঘৃণ্যতম ঘটনা বাড়ছে। পাশাপাশি প্রতিপক্ষের নেতাদের লক্ষ করে ব্যক্তি পর্যায়ে আক্রমণাত্মক, অশালীন, শিষ্টাচার বর্জিত, অশোভন ভাষার ব্যবহারও প্রত্যক্ষ হচ্ছে।দলের চেয়ে ব্যক্তি পুজাঁ বেশী হচ্ছে।দেশপ্রেম হারিয়ে যাচ্ছে।কোন বিষয়েই মতৈক্য হতে পারে না।

অথচ রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে দেশের সাধারণ মানুষ এ ধরনের কর্মকাণ্ড, বক্তব্য, বিবৃতি, কাদা ছোড়াছুড়ি আশা করেন না। রাজনীতিতে, রাজপথে রাজনৈতিক দলগুলোর এ ধরনের কর্মকাণ্ড কখনও গণতন্ত্রের জন্য, দেশের জন্য, দেশের মানুষের কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না।

নেহাল আহমেদ ।
কবি ও সাংবাদিক ,রাজবাড়ী ।

সর্বশেষ পোষ্ট

এই ধরনের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here