Saturday, November 2, 2024

রাজবাড়ীর পেঁয়াজ যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়

রাজবাড়ী প্রতিনিধি ॥ তেলের পর দেশে পিঁয়াজের দাম বৃদ্ধি নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। তবে কৃষক বলেছে গ্রামের বাজারে পিঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ৭টাকা। তারপরও পিঁয়াজ বিক্রি করে লোকসান হচ্ছে এমনই দাবি চাষীদের। প্রতিবেশি দেশ ভারত থেকে পিঁয়াজ আমদানি বন্ধের কারণে দেশের বাজারে কিছুটা দাম বেড়েছে।
রবিবার রাজবাড়ীর সদর উপজেলার কোলারহাট ও বালিয়াকান্দি উপজেলার বালিয়াকান্দি পিঁয়াজের হাট ছিল। এদিন বালিয়াকান্দি বাজারে প্রতিমন পিঁয়াজ বিক্রি হয় ৯৬০ টাকা থেকে ১০২০ টাকা করে মন। রাজবাড়ী সদর উপজেলার কোলারহাট বাজারে প্রতি কেজি পিঁয়াজ কৃষক বিক্রি করছে প্রকার ভেদে ২৬ টাকা থেকে ২৭.৫০ টাকা দরে। মন হিসেবে ১০৪০ টাকা থেকে ১১শ টাকা দরে। স্থানীয় ব্যবসায়ী গ্রামের বাজার থেকে রাজধানীতে নিয়ে বিক্রি করবে প্রতি কেজি ৩১ টাকা থেকে ৩৩ টাকা দরে। তবে এই দামে পিঁয়াজ বিক্রি করে কৃষক মোটেই খুশি নয়। চাষীদের দাবি এ বছর এক কেজি পিঁয়াজের উৎপাদন খরচ পড়েছে ৩২ থেকে ৩৫ টাকা করে। সেখানে বিক্রি হচ্ছে ২৬ থেকে ২৭ টাকা কেজি। পিঁয়াজ ঘরে রেখে দিলে ওজন কমতে থাকে। আবার গত এক সপ্তাহ ধরে বৃষ্টিপাত থাকার কারণে অনেক কৃষকের পিঁয়াজ পচে যাচ্ছে। জ্বালানী তেল, শ্রমিক, সার কীটনাশকের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খরচ অন্য বছরের তুলনায় বেড়েছে। এছাড়া আবহাওয়া অনুকুলে না থাকায় পিঁয়াজের ফলনও আশানুরুপ হয়নি। অনেক কৃষক বলছে এ ভাবে লোকসান হলে আগামী বছর অন্য ফসল আবাদ করতে হবে। কারণ এক সপ্তাহ আগে প্রতিমন পিঁয়াজ বাজারে বিক্রি হয়েছে ৭৫০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা দরে। চাষীদের দাবি প্রতিমন পিঁয়াজ ১৫শ টাকা দরে বিক্রি করতে পারলে আসল টাকা উঠবে।

পাংশা উপজেলার সরিষা ইউনিয়নের কৃষক হাসান আলী বলেন, এক শতক জমি এক বছরের জন্য লিজ (ভাড়া) নিতে হয় ১২০০ টাকা দিয়ে। সেই জমিতে পিঁয়াজ চাষ করে যদি এক হাজার টাকা মন বিক্রি করতে হয় তাহলে কিছুই থাকে না। ঈদের আগে দুইদিন হাটে পিঁয়াজ নিয়ে ফিরে এসেছি। বিক্রি করতে পারিনি। আজকে ৯৮০ টাকা করে বিক্রি করেছি। এভাবে দাম পেলে আমাদের পথে বসতে হবে।

সঞ্চয় বর্মণ বলেন, সার ও কীটনাশকের দোকানে হালখাতা, সেচ ও নাঙ্গলের টাকা দেবার জন্য ৭০০ টাকা মন পিঁয়াজ অর্ধেক বিক্রি করতে হয়েছে। এখন বৃষ্টির কারণে পিঁয়াজে পচন দেখা দিয়েছে। তার উপর প্রতিমন পিঁয়াজে দাম একটু বাড়ায় চারদিকে যে প্রচার তাতে কৃষকরে বেঁচে থাকা কষ্টকর।

রাজবাড়ীর সদরের কোলার হাট বাজারে পিঁয়াজ বিক্রি করতে আসা কৃষক আকুল শেখ বলেন, কৃষক মরে গেলেও কেউ দেখে না। এবছর পিঁয়াজ চাষ করতে গিয়ে একদম শেষ। লাভ তো হবেই না সারা বছর কিস্তি দিবো কি করে সেই চিন্তাই আছি। একমন পিঁয়াজ যদি ১৫০০ টাকায় বিক্রি করতে পারতাম তাহলে লাভ না আসল থাকতো।
পিঁয়াজ ব্যবসায়ী দেলোয়ার সরদার বলেন, আমাদের ঢাকা থেকে মহাজন যে দাম বলে দেয় তার থেকে কেজিতে তিন টাকা থেকে সাড়ে তিন টাকা কমে আমরা পিঁয়াজ কিনে থাকি। আমাদের গাড়ী ভাড়া দিয়ে ঢাকা পাঠাতে কেজি প্রতি আড়াই টাকার বেশি খরচ হয়।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এসএম সহীদ নূর আকবর বলেন, কৃষকের এক কেজি পিঁয়াজ উৎপাদনে সব কিছু মিলে খরচ হয়েছে ২১ টাকা। মৌসুমে বিক্রি করে লোকসান হলেও এখন কৃষকের পিঁয়াজে লাভ হচ্ছে। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, রাজবাড়ী থেকে প্রতিদিন গড়ে সাতশ থেকে আটশ মেট্রিকটন পিঁয়াজ দেশের বিভিন্ন জেলাতে যায়। এবছর জেলায় ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে পিঁয়াজ চাষ হয়েছে। দেশের উৎপাদিত মোট পিঁয়াজের ১৪ শতাংশ এ জেলায় উৎপাদিত হয়।

সর্বশেষ পোষ্ট

এই ধরনের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here