Saturday, April 27, 2024

রাজবাড়ী জেলার নামকরণের ইতিহাস

  • বর্তমান রাজবাড়ী জেলা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৭৬৫ সালে ইংরেজরা বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানী লাভের পর উত্তর পশ্চিম ফরিদপুর (বর্তমান রাজবাড়ী জেলার কিয়দংশ) অঞ্চল রাজশাহীর জমিদারীর অন্তর্ভুক্ত ছিল।

নাটোর রাজার জমিদারী চিহ্ন হিসেবে রাজবাড়ী জেলার বেলগাছিতে রয়েছে স্নানমঞ্চ, দোলমঞ্চ। পরবর্তীতে এ জেলা এক সময় যশোর জেলার অংশ ছিল। ১৮১১ সালে ফরিদপুর জেলা সৃষ্টি হলে রাজবাড়ীকে এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

এছাড়াও রাজবাড়ী জেলার বর্তমান উপজেলাগুলো অতীতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। পাংশা থানা এক সময় পাবনাজেলার অংশ ছিল। ১৮৫৯ সালে পাংশা ও বালিয়াকান্দিকে নবগঠিত কুমারখালী মহকুমার অধীনে নেয়া হয়। ১৮৭১ সালে গোয়ালন্দ মহকুমা গঠিত হলে পাংশা ও রাজবাড়ী এ নতুন মহকুমার সঙ্গে যুক্ত হয় এবং রাজবাড়ীতে মহকুমা সদর দফতর স্থাপিত হয়। ১৮০৭ সালে ঢাকা জালালপুরের হেড কোয়ার্টার ফরিদপুরে স্থানান্তর করা হয় এবং পাংশা থানা ফরিদপুরের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৮৫০ সালে লর্ড ডালহৌসির সময় ঢাকা জালালপুর ভেঙ্গে ফরিদপুর জেলা গঠিত হলে গোয়ালন্দ তখন ফরিদপুরের অধীনে চলে যায়। তখন পাংশা, বালিয়াকান্দি পাবনা জেলাধীন ছিল। ১৯৮৩ সালে সরকার প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে প্রতিটি থানাকে মান উন্নীত থানায় রূপান্তরিত করলে রাজবাড়ীকে মান উন্নীত থানা ঘোষণা করা হয়। ১৯৮৩ সালের ১৮ই জুলাই থেকে সরকার অধ্যাদেশ জারী করে সকল মান উন্নীত থানাকে উপজেলায় রূপান্তরিত করার ফলে রাজবাড়ী উপজেলা হয়। গোয়ালন্দ মহকুমার প্রশাসনিক দপ্তর রাজবাড়ীতে থাকায় অবশেষে ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ সকল মহকুমাকে জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সে থেকে রাজবাড়ী জেলায় রূপান্তরিত হয়।

রাজবাড়ী যে কোন রাজার বাড়ীর নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছে এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। রাজার নামে রাজবাড়ী। রাজবাড়ীর সেই রাজা নেই। কিন্তু রাজবাড়ী জেলা রাজার সেই ঐতিহ্য ধারণ করে আছে আজো। পদ্মা, হড়াই, গড়াই, চন্দনা, কুমার আর চত্রা পলিবাহিত এক কালের ‘বাংলার প্রবেশদ্বার’ বলে পরিচিত গোয়ালন্দ মহকুমা আজকের রাজবাড়ী জেলা । ১৯৮৪ সালের ১ লা মার্চ গোয়ালন্দ মহকুমা রাজবাড়ী জেলায় রুপান্তরিত হয় । তবে কখন থেকে ও কোন রাজার নামানুসারে রাজবাড়ী নামটি এসেছে তার সুনির্দিষ্ট ঐতিহাসিক কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। বাংলার রেল ভ্রমণ পুস্তকের (এল.এন. মিশ্র প্রকাশিত ইস্ট বেঙ্গল রেলওয়ে ক্যালকাটা ১৯৩৫) একশ নয় পৃষ্ঠায় রাজবাড়ী সম্বন্ধে যে তথ্য পাওয়া যায় তাতে দেখা যায় যে, ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দে নবাব শায়েস্তা খান ঢাকায় সুবাদার নিযুক্ত হয়ে আসেন। এ সময় এ অঞ্চলে পর্তুগীজ জলদস্যুদের দমনের জন্যে তিনি সংগ্রাম শাহকে নাওয়ারা প্রধান করে পাঠান। তিনি বানিবহতে স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন এবং লালগোলা নামক স্থানে দুর্গ নির্মাণ করেন। এ লালগোলা দুর্গই রাজবাড়ী শহরের কয়েক কিলোমিটার উত্তরে বর্তমানে লালগোলা গ্রাম নামে পরিচিত। সংগ্রাম শাহ্ ও তার পরিবার পরবর্তীকালে ‘বানিবহে’র নাওয়ারা চৌধুরী হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন।

এল.এন. মিশ্র উক্ত পুস্তকে উল্লেখ করেন যে, রাজা সংগ্রাম শাহের রাজদরবার বা রাজকাচারী ও প্রধান নিয়ন্ত্রণকারী অফিস বর্তমান রাজবাড়ী এলাকাকে কাগজে কলমে রাজবাড়ী লিখতেন (লোকমুখে প্রচলিত)। ঐ পুস্তকের শেষের পাতায় রেলওয়ে স্টেশন হিসেবে রাজবাড়ী নামটি লিখিত পাওয়া যায়।

উল্লেখ্য যে, রাজবাড়ী রেল স্টেশনটি ১৮৯০ সালে স্থাপিত হয়। ঐতিহাসিক আনন্দনাথ রায় ফরিদপুরের ইতিহাস পুস্তকে বানিবহের বর্ণনায় লিখেছেন – নাওয়ারা চৌধুরীগণ পাঁচথুপি থেকে প্রায় ৩০০ বছর পূর্বে বানিবহে এসে বসবাস শুরু করেন। বানিবহ তখন ছিল জনাকীর্ণ স্থান। বিদ্যাবাগিশ পাড়া, আচার্য পাড়া, ভট্টাচার্য পাড়া, শেনহাটিপাড়া, বসুপাড়া, বেনেপাড়া, নুনেপাড়া নিয়ে ছিল বানিবহ এলাকা। নাওয়ারা চৌধুরীগণের বাড়ি স্বদেশীগণের নিকট রাজবাড়ী নামে অভিহিত ছিল। মতান্তরে রাজা সূর্য কুমারের নামানুসারে রাজবাড়ীর নামকরণ হয়। রাজা সূর্য কুমারের পিতামহ প্রভুরাম নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার রাজকর্মচারী থাকাকালীন কোন কারণে ইংরেজদের বিরাগভাজন হলে পলাশীর যুদ্ধের পর লক্ষীকোলে এসে আত্মগোপন করেন। পরে তার পুত্র দ্বিগেন্দ্র প্রসাদ এ অঞ্চলে জমিদারী গড়ে তোলেন। তারই পুত্র রাজা সুর্য কুমার ১৮৮৫ সালে জনহিতকর কাজের জন্য রাজা উপাধি প্রাপ্ত হন। রাজবাড়ী রেল স্টেশন এর নামকরণ করা হয় ১৮৯০ সালে। বিভিন্ন তথ্য হতে জানা যায় যে, রাজবাড়ী রেল স্টেশন এর নামকরণ রাজা সূর্য কুমারের নামানুসারে করার দাবি তোলা হলে বানিবহের জমিদারগণ প্রবল আপত্তি তোলেন। উল্লেখ্য, বর্তমানে যে স্থানটিতে রাজবাড়ী রেল স্টেশন অবস্থিত উক্ত জমির মালিকানা ছিল বানিবহের জমিদারগণের। তাদের প্রতিবাদের কারণেই স্টেশনের নাম রাজবাড়ীই থেকে যায়। এ সকল বিশ্লেষণ থেকে ধারণা করা হয় যে, রাজবাড়ী নামটি বহু পূর্ব থেকেই প্রচলিত ছিল। এলাকার নাওয়ারা প্রধান, জমিদার, প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তিগণ রাজা বলে অভিহিত হতেন। তবে রাজা সূর্য কুমার ও তার পূর্ব পুরুষগণের লক্ষীকোলের বাড়ীটি লোকমুখে রাজার বাড়ি বলে সমধিক পরিচিত ছিল। এভাবেই পরিচিত হয় আজকের রাজবাড়ী।

 

(১)-

তথ্যসূত্রঃ গুগল/অনলাইন।।

সর্বশেষ পোষ্ট

এই ধরনের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here