Friday, November 22, 2024

যৌনপল্লীকে ঘিরে যৌন উত্তেজক ওষুধের রমরমা ব্যবসা

রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় গড়ে উঠেছে দেশের বৃহত্তম যৌনপল্লী। আর এই যৌনপল্লিকে ঘিরেই ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ যৌন উত্তেজক ওষুধের রমরমা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আর এই ঔষধ যারা বিক্রি করছেন অধিকাংশই পল্লি চিকিৎসক বা চিকিৎসক নন এমন বিক্রেতাগন। ফলে অনুমোদনহীন ক্ষতিকর এ সকল ওষুধ সেবন করে প্রতিনিয়ত ঘটছে প্রাণহানি।

দৌলতদিয়া যৌনপল্লির অলিতে গলিতে কান পাতলেই শোনা যায় অনেক অপ্রাপ্ত বয়স্ক বা স্বাস্থ্যহীন যৌনকর্মী আছে যাদের গরু মোটাতাজা করুন ঔষধ খাইয়ে মোটাতাজা করা হয়েছে। এই যৌন পল্লি কে ঘিরে এর ভিতরে এবং রেলস্টেশনে অসংখ্য ঔষধের দোকান গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি গত ৩ ও ৪ সেপ্টেম্বর এ ধরনের ওষুধ সেবন করে এখানে ২ ব্যক্তির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এরা হলো ঢাকার ওয়ারী এলাকার ইলেকট্রিক ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন বাবু (৫০) এবং মাগুরার মোহাম্মদপুর থানার রিমন বিশ্বাস (৪৫)।এর আগেও এ পল্লীতে এভাবে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোন রকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দৌলতদিয়া যৌনপল্লী এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে অবাধে বিক্রি হয়ে আসছে অবৈধ যৌন উত্তেজক ওষুধ। অনেক বাড়ি ওয়ালি তাদের যৌনকর্মীদের স্বাস্থ্যবান বানাতে বা যারা এখানে আসেন তারা ও হাতের নাগালে এগুলো পাওয়ার কারণে সেবন করে থাকেন। ফলে অনেককে প্রান হারাতে হয়।

দৌলতদিয়ার এই যৌনপল্লির যৌনপল্লীর ভেতরে এবং বাইরের রেলষ্টেশন তো বটেই। এছাড়াও পোড়াভিটা ও বাজারের বিভিন্ন মুদি দোকান ও পান-সিগারেটের দোকানে খুব সহজেই পাওয়া যায় প্রাণঘাতি ক্ষতিকর এ ধরনের ওষুধ।এছাড়া স্থানীয় কতিপয় ঔষুধ ব্যবসায়ী ও হাতুড়ে ডাক্তার এমনকি অনেকে হকারি করেও পল্লীর ভিতরে এ ধরনের ঔষুধ বিক্রি করে থাকে।

যৌনপল্লীর কয়েকজন জানান, সহজেই হাতের নাগালে পাওয়া যাওয়ায় পল্লীতে আসা অনেক মানুষ অধিক বিনোদনের আশায় অহরহ এসব ঔষুধ সেবন করে থাকে। এতে করে একের পর এক প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। এছাড়া মারা না গেলেও এ জাতীয় ঔষুধ সেবনকারীদের শরীরে সৃষ্টি হয় দীর্ঘমেয়াদী নানা জটিলতা।
সম্প্রতি এ ব্যাপারে অভিযানে নামে প্রশাসন গতকাল বৃহস্পতিবার(৯ সেপ্টেম্বর) র্র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন অভিযান পরিচালনা করে আলম মন্ডল নামে এক ব্যাক্তির লন্ড্রির দোকান থেকে ব্যাপক পরিমাণে যৌন উত্তেজক ঔষধ সহ আলম মন্ডল কে গ্রেফতার করে।
অপরদিকে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক কিশোরী ও ভঙ্গুর স্বাস্থ্যের মেয়েদের মোটাতাজা ও আকর্ষণীয় করতে তাদেরকে নিয়মিত ষ্টেরয়েড জাতীয় বিভিন্ন ক্ষতিকর ওষুধ সেবন করানো হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। এতে করে এ সকল মেয়েরা মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হওয়া ছাড়াও অনেকেই অকালে মৃত্যু বরণ করেছে।

দৌলতদিয়া যৌনপল্লীকে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে একটি শক্তিশালী নারী পাচারকারী চক্র সক্রিয় রয়েছে। তারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নানা ভাবে ফুসলিয়ে এবং অপহরন করে অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক এবং দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের এ পল্লীতে বিক্রি করে দেয় । এদের বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় তাদের রুগ্ন স্বাস্থ্য। ফলে এ সকল মেয়েদের দ্রুত স্বাস্থ্যবান ও আকর্ষনীয় করে গড়ে তুলতে বাড়ীয়ালা-বাড়ীয়ালীরা তাদেরকে বিভিন্ন ট্যাবলেট ও ইনজেকশন গ্রহনে বাধ্য করা হয়।

সরেজমিন দেখা গেছে, দৌলতদিয়া যৌনপল্লী এলাকায় যৌন উত্তেজক ওষুধ হিসেবে হর্সফিলিং, জিনসিন, সেনেগেরা ১০০ এমজি, একগিরা ১০০ এমজি সহ বিভিন্ন নামের তরল ওষুধ বিক্রি হচ্ছে।এছাড়া মোটাতাজা ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ওরাডেক্সন গ্রুপের ওষুধ ও ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।

দৌলতদিয়া বাজার এলাকার ওষুধ ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম দাবী করে বলেন, তারা প্রকৃত ওষুধ ব্যবসায়ীরা কেউই এ ধরনের অনুনোমোদিত ও ক্ষতিকর ওষুধ বিক্রি করেন না। ওগুলো যৌনপল্লীর অভ্যন্তর এবং আশপাশের বিভিন্ন দোকানে বিক্রি হয়ে থাকে।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর জানান, যৌনপল্লীতে বেশীরভাগ অস্বাভাবিক মৃত্যুর পেছনে অতিমাত্রায় যৌন উত্তেজক ওষুধ সেবন করা দায়ী।

দৌলতদিয়া গনস্বাস্হ্য কেন্দ্রের ইনচার্জ জুলফিকার আলি বলেন, আমরা যৌনপল্লীতে চিকিৎসা সেবা দেয়া ছাড়াও নানা বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করি। কিন্তু অসাধু চক্রের কারনে এখানকার জনস্বাস্হ্য চরম হুমকির মুখে রয়েছে।

গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আসিফ মাহমুদ জানান, যে কোন ওষুধই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ক্রয়-বিক্রয় ও সেবন অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ। দৌলতদিয়া যৌনপল্লী এলাকায় যে সকল যৌন উত্তেজক ওষুধ হিসেবে বিক্রি করা হয় এগুলো সম্পর্কে আমার তেমন কোন ধারনা নেই। তবে ওরাডেক্সন গ্রুপের যে ওষুধ সেবন করা হয় এটা মূলত হাপানি, এ্যাজমা, গিরা ব্যাথা, রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হওয়া রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সাধারনত এ ওষুধ প্রয়োগের ক্ষেত্রে রোগীর বয়স, ওজনসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে মাত্রা নির্ধারন করা হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এ জাতীয় ওষুধ ব্যবহারকারীর মস্তিষ্ক বিকৃতি, উচ্চ রক্তচাপ, স্মরন শক্তি লোপ পাওয়া, ডায়াবেটিকস, হার্টের মাংশ পেশি বেড়ে রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা, লিভার সমস্যা, কিডনি ফেইলর, শরীরে পানি জমে যাওয়া, চর্মরোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে ।

ফরিদপুর ওষুধ প্রশাসনের সহকারী পরিচালক বাদাল শিকদার জানান, আমাদের লোকবল সংকট রয়েছে। তারপরও উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে এ ধরনের ওষুধ বিক্রি বন্ধ করা সহ এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনা করা হবে।

সর্বশেষ পোষ্ট

এই ধরনের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here