রাজবাড়ী জার্নাল ডেস্কঃ রাজবাড়ীতে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে, ২৬শে নভেম্বর দুপুর ১২ টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় শহিদদের পরিবার ও আহতদের সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা ।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের স্মরণে এবং আহতদের সম্মানে তাঁদের পরিবারের সদস্যবৃন্দের উপস্থিতিতে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়।
সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত, গীতা পাঠ এবং শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
স্মরণসভায় অন্যান্যদের মধ্যে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহিদ মোঃ কুরমান শেখের কন্যা মিতু আক্তার মিতা, শহিদ মোঃ সাগর আহম্মেদের পিতা মোঃ তোফাজ্জেল হোসেন এবং শহিদ মোঃ আব্দুল গনির স্ত্রী লাকী আক্তার স্মৃতিচারণ করেন।
এসময় শহিদ মোঃ সাগর আহম্মেদের পিতা মোঃ তোফাজ্জেল হোসেন তার সন্তানের জন্য সকলের দোয়া প্রার্থনা করেন এবং আর কোন মা-বাবার বুক যেন খালি না হয় তেমন একটি রাষ্ট্র গঠনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন। যে উদ্দেশ্যে শহিদগণ আত্মত্যাগ করেছেন সে উদ্দেশ্য যেন সফল হয় সেই আহ্বান জানান তিনি।
শহিদ মোঃ কুরমান শেখের কন্যা মিতু আক্তার মিতা বলেন, একজন সন্তানের কাছে তার বাবার উপস্থিতি যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা শুধুমাত্র বাবা হারানো ব্যক্তি বলতে পারেন। বাবাকে হারিয়ে তারা ভীষণভাবে শোকাহত এবং অসহায় অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন।
পরবর্তীতে মোঃ আব্দুল গনির স্ত্রী লাকী আক্তার জানান, স্বামীকে হারিয়ে ছোট্ট একটি শিশুকে নিয়ে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। তিনি শিশুটির ভবিষ্যত এবং আর্থিক নিরাপত্তা বিধানে স্থায়ী আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
এছাড়াও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে আলী আহসান, মিজানুর রহমান, সমন্বয়ক মিরাজুল ইসলাম তূর্য প্রমুখ বক্তব্য প্রদান করেন। তারা আহত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিতকরণ এবং পঙ্গুত্ববরণকারী ব্যক্তিদের হাত-পা সংযোজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আবেদন জানান। এছাড়াও গণঅভ্যুত্থানে নির্যাতনের শিকার, আহত ও শহিদদের সুবিচার নিশ্চিতকল্পে দোষী এবং দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
পরবর্তীতে গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে দোয়া করা হয় এবং শহিদ পরিবারের সদস্যবৃন্দকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
সভায় রাজবাড়ী জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটন এবং পুলিশ সুপার মোছাঃ শামিমা পারভীন বক্তব্য বক্তব্য রাখেন।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা সমাপনী বক্তব্যে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহিদ এবং আহতদের অবদানের কথা গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন এবং শহিদ ও ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিবর্গের আত্মত্যাগের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে এ আত্মত্যাগ এবং গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত তা পূরণকল্পে সকলের সম্মিলিত সাহায্য ও সহযোগিতা কামনা করেন।
তিনি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আহত এবং শহিদদের পরিবারকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করেন এবং ভবিষ্যতে সর্বদা তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা পঙ্গুত্ববরণকারী ব্যক্তিবর্গের কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজনের ব্যাপারে সকলকে আশ্বস্ত করেন। এছাড়াও গুলিবিদ্ধ ও গুরুতর আহত ব্যক্তিবর্গের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
পরিশেষে তিনি ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের উদ্দেশ্যকে সমুন্নত রেখে সকলকে সাথে নিয়ে পরিবর্তিত বাংলাদেশ গড়ে তোলার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে রাজবাড়ী জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সিদ্ধার্থ ভৌমিক, অতিরিক্ত পু্লিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) শরীফ আল রাজীব, সকল উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসারবৃন্দ, জেলা সমাজসেবা অফিসার , প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কর্মীবৃন্দ, এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।’