নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে অবস্থিত ভিক্টর ব্রিডার্স ও ভিক্টর ভিলেজে মুরগীর বিষ্ঠার দুর্গন্ধ ও ভিক্টর ফিডের কারখানার উচ্চ শব্দে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ২০০৩ সালে গোয়ালন্দের জমিদার ব্রীজ এলাকার পাশে ভিক্টর ফিড এবং ভিক্টর ব্রিডার্স নামে দুটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন রুহুল আমিন নামে এক ব্যাক্তি । প্রায় ৩৬ বিঘা জমির উপর প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানে মুরগি পালন ও ডিম উৎপাদন এবং হাঁসমুরগির খাবার তৈরি করা হয়। প্রতিষ্ঠানের শুরু থেকেই এলাকাবাসীর অভিযোগ ছিলো এই প্রতিষ্ঠানের মালিকের বিরুদ্ধে । পরিবেশ দূষণ, স্থানীয় বাসীন্দাদের সাথে জমি নিয়ে দ্বন্দ ও প্রতিষ্ঠানের পাশেই সরকারি খাল দখল সহ নানা অভিযোগ থাকা শর্তেও ক্ষমতার ব্যাবহার করে চালিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে স্থানী প্রশাসনের কাছে গণপিটিশন সহ লিখিত অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। তবুও পান নি কোন প্রতিকার ।
সরুপার চর এলাকার বাসিন্দা নুর আলী শেখ বলেন, জমিদার ব্রীজ এলাকা থেকে সরুপার চর পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এলাকার খালটি দুই ইউনিয়নের সাথে যুক্ত হয়ে মূল পদ্মায় যুক্ত ছিলো । এখানে পাঠ পচানো হতো , মাছ ধরা হতো । এই খালটি দখল করে ভিক্টর ব্রিডার্স ও ভিক্টর ফিডস এর মালিক । স্থানীয় বাসিন্দা সিদ্দিক মোল্লা বলেন, আমার ঘরের সাথে মুরগির খামার ,দূর্গন্ধে থাকতে পারিনা, পরিবার নিয়ে বসবাস করতে খুবই কষ্ট হয়। আমরা অভিযোগ করেছি বলে আমাদেরকে এখান থেকে অন্য যায়গায় চলে যেতে বলছে ,পরিবার নিয়ে আমরা কোথায় যাবো ? বিভিন্ন সময় আমাদেরকে ভয় দেখায়, আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি ।
স্থানীয় বাসিন্দা সালেহা জানান, মুরগির বিষ্ঠার দুর্গন্ধে আর মেশিনের উচ্চ শব্দে আমাদের বসবাস করা কঠিন হয়ে গেছে। সরকারি লোক আসে ঘুরে যায়,তারা বলে আমরা গন্ধ পাইনা ,আপনারা গন্ধ পান কিভাবে ? তারা তো থাকে এসি অফিসে সেখানে তো গন্ধ যায় না । আমাদের বসবাস করা খুব কঠিন হয়েগেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ঝুমুর জানান, ভিক্টর ফিড এখন প্রাণ কোম্পানীর কাছে ভাড়া দিয়েছে । দিনরাত মেশিনের শব্দে আমরা রাতে ঠিকমত ঘুমাতে পারিনা। এমন উচ্চ শব্দে দিনরাত মেশিন চলে আমরা দিনের বেলায় কাছের কাউকে ডাকতে হলে অনেক জোরে ডাকতে হয়,নইলে কেউ কানে শোনেনা । তিনি আরোও বলেন, আলামিন নামে এখানের বাসিন্দা স্ত্রী সন্তান নিয়ে অন্য যায়গায় বাসা ভাড়া থাকেন। আবার মাঝে মাঝে কারখানায় বিকট শব্দ হয়, এর আগে বিদ্যুতের সমস্যা হয়েছিলো কারখানায়,আমাদের টিভি ,ফ্রিজ নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো, তারা বলেছিলো সেরে দিবে পরে কোন সহযোগিতা করে নাই।
স্থানীয় বাসিন্দা সেলিনা জানান, কারখানার মেশিনের উচ্চ শব্দে আযান শুনতে পারিনা । রমজান মাসে ঘড়ি দেখে সেহরি খেয়েছি,ইফতার করেছি। মুরগির বিষ্ঠার দূর্ঘন্ধ আর কারখানার মেশিনের উচ্চ শব্দে আমরা অতিষ্ঠ ,এখানে বিশটি পরিবার খুব যন্ত্রণায় আছি আমাদের দেখার কেউ নেই।
গোয়ালন্দের দক্ষিণ উজানচর এলাকায় একই মালিকের প্রতিষ্ঠিত ভিক্টর ভিলেজ , সেখানেও পালন করা হয় মুরগি। বিশাল এলাকা নিয়ে এই ভিক্টর ভিলেজে পালন করা হউ মুরগি। মুরগির বিষ্ঠার দূর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে প্রায় আড়াশতাধিক বাসিন্দারা স্থানীয় প্রশাসনের নিকট লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন ।
স্থানীয়েদের দাবী মরা মুরগি মাঝে মাঝে মাঠে ফেলে দেয় ব্যাপক দূর্গন্ধ ছড়ায়। বসবাস করাই কঠিন হয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা রব খান জানান, মুরগির দুর্গন্ধে আমাদের বসবাস করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আমরা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েছি, এখনোও কোন প্রতিকার পাইনি। আমাদের সন্তানেরা প্রায়ই অসুখবিসুখে আক্রান্ত থাকে। এ ভিক্টর ভিলেজের মুরগির গন্ধে আমরা অতিষ্ঠ। সরকারের কাছে দাবি জানাই যেন দ্রুত ব্যাবস্থা নেন।
স্থানীয় বাসিন্দা পলি জানান, ঘরে থাকা যায়না মুরগির বিষ্ঠার দূর্গন্ধে ,আবার বিকেলে এ এলাকায় ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে ঘুরতে আসে অনেকেই,কিন্তু দূর্গন্ধের কারনে সবাই চলে যায়, আমরা চাই একাকাবাসীর স্বার্থে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহন করুক।
এ বিষয়ে ভিক্টর ফিড ও ব্রিডার্স এর গোয়ালন্দ অফিসে গিয়ে মালিক পক্ষের কাউকে পাওয়া যায় নি। এসকল অভিযোগ অস্বীকার করে ম্যানেজার ওবায়দুর রহমান মানব কন্ঠকে বলেন, ভিক্টর ফিডের পাশে কোন সরকারি খাল আমরা দখল করিনি ,ব্যাক্তিগত জমি কেনা হয়েছে। পরিবেশের ছাড় পত্র সহ ২৪ টি সরকারি ছাড়পত্র রয়েছে । এখানে মুরগি ও ডিম উৎপাদন করা হয়। ভিক্টর ফিড প্রাণ কোম্পানিকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে, মেশিনের শব্দ তো হবেই। আমাদের কাগজপত্র যদি না থাকে প্রশাসন তো এতদিন ব্যাবস্থা নিতেন।
এ বিষয়ে রাজবাড়ী পরিবেশ অধিদফতরের সহকারি পরিচালক, মো:হারুন-অর-রশিদ বলেন, ভিক্টর ফিডের ছাড়পত্র আছে ,কিন্তু ভিক্টর ব্রিডার্স ও ভিক্টর ভিলেজের পরিবেশের ছাড়পত্র নেই। আমরা গোয়ালন্দ উপজেলা প্রশাসনের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছি ,আমরা খুব দ্রুতই ব্যাবস্থা নিব ।
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: নাহিদুর রহমান বলেন , ভিক্টর ব্রিডার্স ও ভিক্টর ভিলেজের বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া গেছে ,আমরা পরিবেশ অধিদফতরের সাথে ইতোমধ্যে যোগাযোগ করেছি । আমরা প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করব এবং আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে । ”