Friday, November 22, 2024

জরাজীর্ণ অবস্থায় গোয়ালন্দ শিল্প কলা একাডেমি দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে

  • রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির ভবন টি জরাজীর্ণ অবস্থায় কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সব আছে কিন্তু দীর্ঘ দিন কোন কার্যক্রম নেই ফলে সাংস্কৃতিক মনা মানুষ ও ছাত্র ছাত্রীরা বঞ্চিত হচ্ছে এ সেবা থেকে।

জানাগেছে,এখানে কোন বাদ্যযন্ত্র নেই, নেই কোন রেজুলেশন খাতা৷ বইয়ের আলমারি আর দুইয়েকটি বাদ্যযন্ত্র রাখার তাক ধূলা বালুর মধ্য আছে অযত্নে ।

শিল্পকলা একাডেমির ভবনে একসময় অভিনয়, আবৃত্তি ও নাচে-গানে মুখরিত থাকত। অভিভাবকেরা তাদের সন্তানেদের এখানে নিয়ে সাংস্কৃতি মনা হিসাবে তার সন্তানদের গড়ে তুলতে। কিন্তু সেই শিল্পকলা একাডেমিতে এখন সুনসান নীরবতা। হারমোনিয়ামে সুর ওঠে না, বাজে না তবলা, ওঠে না নৃত্তের ঝঙ্কার। প্রায় দেড় যুগের বেশি সময় ধরে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকায় স্থবির শিল্পকলা একাডেমি। কার্যক্রম না থাকায় একাডেমি রূপ নিয়েছে বইয়ের গুদামে। ওই অবস্থা রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৯৫ সালে ১৮ নভেম্বর তৎকালীন সংস্কৃতিক বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপিকা জাহারানা বেগম ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা শিল্পকলার নতুন ভবন উদ্বোধন করেন। লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে চেয়ার, টেবিল, হারমনিয়াম সহ সকল প্রকার বাদ্য যন্ত্র ক্রয় করা হয়। ছিল ছাত্রী-ছাত্রী। গানের শিক্ষক নজরুল ইসলাম কুটি। নাচের শিক্ষক লালন ও তবলার শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন আসাদুজ্জামান সেলিম। নিয়তমিত গান, নৃত্য প্রশিক্ষন দেওয়া হতো। হল রুমের ভাড়া ও ছাত্র-ছাত্রীদের বেতনের টাকা দিয়ে শিল্পকলা একাডেমীর শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হতো। তবে বেতন বন্ধ হয়ে যাওয়ার এক বছর পর সকল শিক্ষক শিল্পকলা একাডেমীতে আসা বন্ধ করে দেয়। শিল্পকলা একাডেমীর সকল ছাত্র-ছাত্রী বাধ্য হয়ে ইচ্ছা থাকার পরও সাংস্কৃতিক জগত থেকে বিছিন্ন হয়ে যায়।
এর পর থেকে শিল্পকলা একাডেমীতে কোন ছাত্রী-ছাত্রী ভর্তি হওয়ার ব্যবস্থা করা হয়নি। নেই কোন শিক্ষক। ২০০১ সালের পর এই শিল্পকলা একাডেমীতে কোন শিক্ষক দেওয়া হয়নি। যে কারণে উপজেলার সাংস্কৃতিক প্রেমি ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির ইচ্ছা থাকা শর্তেও শিল্পকলা একাডেমিতে ভর্তি হতে পারছেনা।সুতরাং অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করে অনেকে নিজ উদ্যেগে গড়ে উঠা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করছে ছেলে-মেয়ে।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে ব্যবহারের জন্য চেয়ার, টেবিল সহ সকল বাদ্য যন্ত্র নষ্ট হয়ে গিয়াছে।ফাঁটল ধরেছে ভবনে। দেয়াল ও ছাদ থেকে সিমেন্ট ধসে পরছে।

গোয়ালন্দ সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সাধারণ সম্পাদক ও তবলা শিক্ষক আসাদুজ্জামান সেলিম বলেন, গোয়ালন্দ শিল্পকলা করোনার বছর দুই আগে অন্য একটা ঘরে ক্ষুদ্র পরিসরে শুরু হয়েছিল।এখন ঐ অবস্থাতেই আছে।উদ্যোগ এবং পরিচালনার অভাব।শিক্ষকদের বেতনের অভাব।আর কিছু চাটুকার এবং অসংস্কৃতিবানরা ইউ এন ও সাহেবকে বিভ্রান্ত করায় শিল্পকলায় এখন শুধু শিল্প আছে কলা নাই।২০১৮ সালে উপজেলা কোয়ার্টার ভবনে সাময়িক সময়ের জন্য কার্যক্রম চালানো হলেও দীর্ঘদিন ধরে সেটা বন্ধ আছে ফলে এই অঞ্চলের জেলে মেয়েদের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বন্ধ। বর্তমান পাচ সদস্য বিশিষ্ট একটি এডহক কমিটি দিয়ে এটি পরিচালিত হচ্ছে । বিধি অনুযায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি হবেন। বাকি পদ সদস্যদের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন করা হবে। বর্তমানে উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি পদাধিকার বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট শিল্প সংস্কৃতি ব্যাক্তিত্ব বাবু নির্মল কুমার চক্রবর্তী এবং তিনজন সদস্য হলেন
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও বর্তমান মেয়র জনাব নজরুল ইসলাম মন্ডল কাগজপত্রে পাচ সদস্যের একটি কমিটি থাকলেও নেই শিল্পকলা একাডেমির কোনো কার্যক্রম।
উপজেলা শিল্পকলা একাডেমিটি গোয়ালন্দ ভূমি অফিসের পাশেই অবস্থিত। শিল্পকলা একাডেমিতে গিয়ে দেখা যায়, শিল্প-সংস্কৃতির কোনো উপাদান নেই একাডেমিতে। খালি পড়ে আছে সবকিছু। খোঁজ নিয়ে জানাযায় পাশেই একটা ভবনে সবকিছু রয়েছে সেখানে গিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমের কিছু বই এবং দুই একটা আলমারি ছাড়া কিছুই দেখা যায় না।
বিশিষ্ট কবি ও গোয়ালন্দ কামরুল ইসলাম সরকারি ডিগ্রি কলেজের সহকারি অধ্যাপক আউয়াল আনোয়ার বলেন, দেশের মানুষকে সংস্কৃতিবান, সাহিত্য মনস্ক,রুচিশীল নাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে শিল্পকলা একাডেমির ভূমিকা অগ্রগণ্য।প্রগতিশীল মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে এর কার্যক্রম চালু রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন।আজকের শিশু কিশোরদের আগামীর দায়িত্বশীল সুনাগরিক হিসাবেও শিল্প কলার গুরুত্ব ব্যাপক।সংগীত, নাটক,নৃত্য, কবিতায় শিশু কিশোরদের মনুষ্য জাগরণ ঘটে। তাই দ্রুত এটা চালু করা প্রয়োজন।

উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক জনান বাবু নির্মল চক্রবর্তী বলেন , শিল্পকলা একাডেমির কার্যক্রম বর্তমান বন্ধ রয়েছে। করোনা কালীল সময়ের পূর্বে কিছুদিন এই কার্যক্রম অল্প পরিমানে চলমান ছিল। আর জিনিস পত্র তেমন কিছুই নেই একটি ভাঙা হারমোনিয়াম ও একটি ভাঙা তবলা ছাড়া এখন আর তেমন কিছুই নেই। তখন সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একটা টিনের ঘর তুলে দিয়ে ছিলেন কিন্তু কিছুদিন পর সেখানে পিআইও সাহেব রিলিফের জিনিসপত্র রাখার ফলে কার্যক্রম ব্যাহত হয় কিন্তু পরবর্তীতে আবার সেই ঘর আমাদের অর্ধেক ব্যাবহার করতে দেন আর বাকি অর্ধেক রিলিফ রাখতে দেন কিন্তু কিছুদিন পর সেখান থেকে গলিত পদার্থ বের হয়ে গন্ধের সৃষ্টি হয় এবং এর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকেই মুলত এর কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ আছে । তারপরও একাডেমির পক্ষ থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা হয়৷ জাতীয় পর্যায়ের সকল অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। তবে এলাকার সাংস্কৃতিক মনা ছেলেমেয়েরা এর সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

গোয়ালন্দ উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব মোস্তফা মুন্সি বলেন, সমাজ থেকে মাদক ও জঙ্গিপনার মতো অপরাধ দূর করতে শিল্প সংস্কৃতির বিকাশ জরুরি।

সর্বশেষ পোষ্ট

এই ধরনের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here