Friday, November 22, 2024

রাজবাড়ীর বালিয়াডাঙ্গি গণহত্যা

রাজবাড়ীর বালিয়াডাঙ্গি গণহত্যা।নেহাল আহমেদঃ  ১৯৭১ সালের ২০ শে এপ্রিল সন্ধ্যায় হাজার হাজার ছাত্র জনতার উপস্থিতে পদ্মার পাড় মুখরিত হয়ে ওঠে।পাকবাহীনি আসবে এই সংবাদে।তৎকালীন ছাত্র নেতা ফকির আব্দুল জব্বারের নেতৃত্বে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়।হাজার হাজার মানুষ লাঠি ঢাল সরকি, তলোয়ার নিয়ে প্রতিরোধ করতে এগিয়ে আসে।সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করে যখন বাড়ী ফেরার প্রস্ততি নিচ্ছিল তখনি পাকিস্থানী বাহীনি আক্রমন করে আধুনিক অস্থের কাছে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি।পাকিস্থানি বাহিনী তান্ডব লীলানচালায়, রাস্তার পাশে বাড়ীঘর জ্বালিয়ে দেয়।হত্যা করা হয় অসংখ্য শিশু, বৃদ্ধা মহিলাকে(৭১ মুক্তিযুদ্ধ রাজবাড়ী) এ সময়ে তৎকালীন রাজবাড়ী জেলার এস ডি ও ডঃ শাহ ফরিদ এর বর্ননায় গোয়ালন্দ ঘাট প্রতিরোধের বর্ননা ভয়াবহ ভাবে ফুটে ওঠে।মুক্তিযুদ্ধে চলাকালীন সময়ে তার বীরত্বতের কথা সবাই শ্রদ্ধা সাথে স্বরণ করে আজো।

২১ এপ্রিল গোয়ালন্দ প্রতিরোধ ও গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর দিকে পাকবাহিনী পদ্মাপারের গোয়ালন্দ মহকুমার গুরুত্বপূর্ণ গোয়ালন্দ ঘাট দখলে নিতে আসলে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে। এরপর পাকবাহিনী নিরস্ত্র মানুষের উপর ব্যাপক গণহত্যা চালায়।

জানা যায়, কাকডাকা ভোরে আরিচাঘাট থেকে একটি গানবোট ও একটি কে-টাইপ ফেরি করে হানাদার বাহিনী এসে নামে তৎকালীন গোয়ালন্দ মহকুমার উজানচর ইউনিয়নের কামারডাঙ্গি এলাকায়। সেখানে স্থানীয় জনতার সহায়তায় ইপিআর, আনছার ও মুক্তিবাহিনীর একটি দল হালকা অস্ত্র নিয়ে প্রতিরোধ সৃষ্টি করে। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। কিন্তু পাকবাহিনীর ভারি অস্ত্রের মুখে অল্প সময়ের মধ্যেই মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধ ভেঙ্গে পড়ে। এসময় শত্রুবাহিনীর বুলেটে শহীদ হন আনছার কমান্ডার মহিউদ্দিন ফকির। এরপর পাকবাহিনী পাশ্ববর্তী বালিয়াডাঙ্গা গ্রাম চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে ব্যাপক গণহত্যাযজ্ঞ চালায়। নিরীহ গ্রামবাসীর ঘরবাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। সেখানে হানাদারের বুলেটে শহীদ হন বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের স্বাধীনতাকামী জিন্দার আলী মৃধা, নায়েব আলী বেপারি, মতিয়ার বেগম, জয়নদ্দিন ফকির, কদর আলী মোল্লা, হামেদ আলী শেখ, কানাই শেখ, ফুলবুরু বেগম, মোলায়েম সরদার, বুরুজান বিবি, কবি তোফাজ্জল হোসেন, আমজাদ হোসেন, মাধব বৈরাগী, আহাম্মদ আলী মন্ডল, খোদেজা বেগম, করিম মোল্লা, আমোদ আলী শেখ, কুরান শেখ, মোকসেদ আলী শেখ, নিশিকান্ত রায়, মাছেম শেখ, ধলাবুরু বেগম, আলেয়া খাতুন, বাহেজ পাগলাসহ নাম না জানা আরো অনেকে। সেই থেকে এই দিনটিকে গোয়ালন্দ প্রতিরোধ দিবস হিসেবে বিবেচনা করে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাসহ সাধারন মানুষ।

সরোজমিনে গত ২০ মার্চ ২০২২ তারিখে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল বালিয়াডাঙ্গি পরিদর্শন করতে গেলে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডর আব্দুস সামাদ মোল্লা বলেন, ২১ শে এপ্রিল ছিল বুধবার। ভোরে পাকহানাদার বাহিনী গোয়ালন্দ আক্রমন ও নিরস্ত্র মানুষের উপর যে গণহত্যা চালিয়েছিল তা ভাবলে এখনো গা শিউরে ওঠে। আমাদের হালকা অস্ত্রের প্রতিরোধ বেশীক্ষন স্থায়ী না হলেও মূলত ওই দিনই আমাদের সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু হয়েছিল।২১ এপ্রিলের দুটি উল্লেখ যোগ্য গঠনা তৎকালীন রাজবাড়ী পুলিশের আর্মায়ার সিরাজুদ্দিন খান ( কনষ্টেবল নং১০২১ এর মৌখিক নির্দেশে অস্ত্রাগারের সকল রাইফেল ও বুলেট নাম ঠিকানা লিখে মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়েদেন। এবং সেই খাতাটি নিজ দায়িত্বে রেখে সব প্রমান পুড়িয়ে দেন।তৎকালীন এস,ডি ও ড শাহ মোহাম্মদ ফরিদ তার চোকোস্লোভাকিয়া ব্রানো ২২ রাইফেল দিয়ে পাক জেট যুদ্ধ জাহাজ তাক করে গুলি করেন( ৭১ মুক্তিযুদ্ধ রাজবাড়ী)

এদিকে ২১ এপ্রিল প্রতিরোধ যুদ্ধস্থলকে স্মরনীয় করে রাখতে সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মানের উদ্যোগ গ্রহন করেছে স্থানীয়রা। এতে সহযোগিতা করছে স্থানীয় প্রশাসন ও রাজবাড়ী জেলা পরিষদ।

সর্বশেষ পোষ্ট

এই ধরনের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here