Wednesday, December 25, 2024

৩য় শ্রেনীর ছাত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের আলাদীপুর ব্রীজ সংলগ্ন ৪নং ওয়ার্ডের মিজানের ভাড়া বাসায় রানু (১১) নামে আলাদীপুর সঃপ্রাঃ বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেনীর এক ছাত্রী রহস্য জনক মৃত্যু হয়েছে।

গত মঙ্গলবার(২২) শে নভেম্বর বেলা ১২ টার দিকে ঘরের বারান্দার রুমের আড়ার সাথে ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে রানুর দাদী ও অন্য ভাড়াটিয়া তাকে রাজবাড়ী সদর হাঁসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিতস্যক তাকে মৃত ঘোষনা করে। খবর পেয়ে ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেছে রাজবাড়ী সদর থানা পুলিশ। পরদিন ২৩শে নভেম্বর (বুধবার) সন্ধ্যায় ময়না তদন্তের পর ওই ছাত্রীর দাফন সম্পন্ন হয়ে।

বুধবার , সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিহত ছত্রীর স্বজনদের আহাজারি । ১২টি রুম বিশিষ্ট্য ঘেরা টিনের চালার একটি বাড়ী , এলাকার সবাই মিজানের বাড়ী বলে চেনেন। এ বাড়ীতেই ভাড়া থাকতেন অটোচালক রানা ও তার স্ত্রী শাহানাজ । শাহানাজ রাজবাড়ী জুট মিলে কাজ করেন আর স্বামী রানা অটো চালান। স্বামী স্ত্রী দুইজন ই বাইরে থাকেন। মেয়ে রানু আলাদীপুর সঃপ্রাঃ বিদ্যালয়ে ৩য় শ্রেনীতে পড়ে। সকলেরই মানসিক অবস্থা ছিলো অত্যন্ত নাজুক।

কথা বলার চেষ্ঠা করা হয়ে রানুর মা’শাহানাজের সাথে। কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি জানান, আমি মিলে কাজ করি । আমি বাড়ীতে ছিলাম না। আমার দেবর সোহেল ফোন করে বলে জরুরি বাড়ীতে আসতে আমি স্যারের কাছে বলে দ্রুত বাড়ী আসি। কিন্তু বাড়ীতে কাউকে পাইনা। আমার মেয়েকে নাকি হাঁসপাতালে নিয়ে গেছে ,শুনে রাজবাড়ী সদর হাঁসপাতালে দৌড়ে গিয়ে দেখি আমার মেয়ের লাশ এক রুমের ভেতর। পরে শুনলাম আমার মেয়ে রুমের আড়ার সাথে নাকি গলায় ওড়না দিয়ে ঝুলে ছিলো । আর তেমন কোন কথা বলতে পারেনি রানুর মা। কান্নায় ভেঙ্গে পরেছে স্বামী স্ত্রী। বাড়ীর চারপাশে কান্নার রোল পরেগেছে।

খুজে বের করি নিহত রানুর বাবা অটো চালক রানা কে। কথা বলার ভাষা নেই ,শুধু কান্না আর কান্না। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় কি হয়েছিলো। রানা জানান, আমি অটো চালাই। প্রতিদিনের মত ওই দিন সকালে দোকান থেকে একটা প্যাটিজ কিনে ওর হাতে দিয়ে বলি খাইস তোর ভাইকেও দিস । অন্য কোথাও যাইস না তোর ভাইকে দেখিস। মেয়ে বলে আচ্ছা কোথাও যাবো না টিভি দেখবোনে, কোথাও যাবোনানে। বলে আমি অটো নিয়ে চলে যাই। পরে বাড়ীতে আসতেই বাড়ীর অন্যান্য ভাড়াটিয়ারা এবং আমার খালাতো ভাই সোহেল বলে তাড়াতাড়ি হাঁসপাতালে যা, আমি বলি হাঁসপাতালে যাবো ক্যা কি হইছে ,পরে শুনি আমার মেয়ে রানু হাঁসপাতালে । রানুর কি হইছে বলেই ছুটে যাই হাঁসপাতালে । গিয়ে দেখি একটা রুমে আমার মেয়ে রানুর লাশ। সবাইকে অনুরোধ করলাম একটা বার আমার মেয়েকে একটু দেখতে দেন ,কেউ দেখতে দিলো না।

পরে শুনলাম আমার মেয়ে নাকি গলায় ফাঁস নিয়েছে। বাড়ীতে মেয়ের সাথে কোন রাগারাগি বা মার ধর করেছিলেন কিনা এমন প্রশ্নে রানা বলেন, আমার ছোট বোনজেসমিনের কি এক ঔষধ যেন আগের দিন আমার মেয়ে নাকি খায়েছিলো আর এ জন্য আমার মা ও ছোট বোন আমার মেয়েকে থাপড় দিয়েছিলো । এটার আবার সমাধানও হয়েছে আমি মেয়েয়েকে বুঝিয়েছি ,কিন্তু সামান্য এ কারণে আমার মেয়ে আত্নহত্যা করতে পারে না ও এমন মেয়ে না। ওর কোন অভিমান নেই ,খুব হাস্যজ্জল চলাফেরা করে। এ ঘটনায় পুলিশ এসেছিলো বাড়ীতে , আমার বোন সহ কয়েকজন কে থানায় নিয়েগেছে বলেও জানান রানুর বাবা রানা।

এ বিষয়ে নিহত রানুর এক আত্নীয় পরিচয় দানকারী আড়াবাড়িয়া স্কুলের শিক্ষক শেখ মোহাম্মদ মঞ্জু জানান, আমি স্কুলে ছিলাম ফোন পেয়ে আসি। পরে শুনি রানু গলায় দড়ি নিয়েছে পরে আসলাম। এসে দেখলাম পুলিশের লোকজনও ছিলো । তারা রুম সার্চ করছে। রানুর ড্রেস ,জামাকাপড় কিছু আলামত নিয়ে গেছে, শুনলাম রানুর ফুফু ও দাদী নাকি রানুকে থাপ্পড় দিয়েছে , পরে এই রাগে ক্ষোভে নাকি রুমের আড়ার মধ্যে গলায় দড়ি নিয়ে ঝুলে ছিলো। পরে হাঁসপাতালে নেওয়া হয়েছিলো ।

এ রুম থেকেই উদ্বার করা হয় ৩য় শ্রেনীর শিক্ষার্থী রানুকে ।

রাজবাড়ী সদর থানার ওসি মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, ময়না তদন্তের পর নিহত শিক্ষার্থী রানুর লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।  বিষয়টি তদন্তানাধীন।

সর্বশেষ পোষ্ট

এই ধরনের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here