স্টাফ রিপোর্টার। রাজবাড়ীর আলীপুরে অবৈধভাবে জবর-দখলের পর এবার ক্রয়সূত্রের জাল দলিল তৈরি করে “ভিপি” সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে ভূমিদখলবাজ মোঃ হানিফ সেখ। ১৯৬৯ সাল উল্লেখ করে পুরোনো দলিল তৈরী করে তা দলিল জালিয়াত চক্রের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে বর্তমান সময়ে রেজিস্ট্রি অফিসের পুরনো ভলিয়মে দলিল লিপিবদ্ধ করতে বিভিন্ন জায়গায় দৌড়ঝাপ করেছে বলেও লোকমুখে শোনা যায়। ওই ভিপি সম্পত্তি পরিচয় হলো- রাজাড়ী জেলার সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের ইন্দ্রনারায়নপুর গ্রামে (পাকা রাস্তা সংলগ্ন) ইন্দ্রনারায়নপুর মৌজার (জেএল নং-১৫৮) ১/১ নং খতিয়ানের “খ”তপশীলভূত্ত বিএস ৪৩৬ নং দাগের ২৪ শতাংশ জমি। যাহার পূর্ব মালিক একটি হিন্দু পরিবার। সিএস, এসএ ও আরএস (রেকর্ড) খতিয়ানে (ভূবন মহিনী, শরৎ চন্দ্র, বিমল চন্দ্র ও অন্নদা চরণ প্রমোদা) ৪ জনের নাম রহিয়াছে।
স্থানীয় এলাকাবাসীরসূত্রে ও তথ্যনুসন্ধানে জানাযায়, জেনৈক মক্কেল সেখের ছেলে মো. হানিফ সেখ তার স্ত্রীসহ ৪ ছেলে, ২ কন্যা ও তার ছেলের বউসহ স্বপরিবারে নিয়ে গোদার বাজারের চর এলাকা থেকে ২০০৮/৯ সালের দিকে আলীপুর ইউনিয়নের ইন্দ্রনারায়নপুর গ্রামে ১৮শতাংশ জমি খরিদ করে বসত বাড়ি করে, যাহার বিএস দাগ নং ৪৩৫। সেই জমি সংলগ্ন পূর্বপাশে ‘খ’ তপশীলভূক্ত ২৪ শতাংশ ভিপি জমি রয়েছে, যাহার বি.এস দাগ নং ৪৩৬। তাহাতে অন্যান্য দরিদ্র লোকজন বসবাস করতো ও কিছু অংশ ফাকা ছিল। উক্ত ভিপি জমিতে স্থানীয়রা একটি কবরস্থান নির্মানের পরিকল্পনা করে। পরবর্তীতে স্থানীয়দের উপেক্ষা করে দাঙ্গাহাঙ্গামা করে ওই ভিপি সম্পত্তি জোরপূর্বক জবর-দখল করে মো. হানিফ সেখ।
এলাকাবাসী জানায়, ভিপি জমিতে বসবাসকারিদেরকে একদিকে নিজ ছেলে-মেয়ে ও ছেলের বউরাসহ জোটবদ্ধ হয়ে দাঙ্গা-ফাসাদ করে ও হয়রানীমূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের উচ্ছেদ করে সেই ভিপি জমি অবৈধভাবে দখল নেয়। এ নিয়ে এলাকাবাসী বাঁধা দিতে ও প্রতিবাদ করতে আসলে তাদের নামেও একদিকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি ও নির্যাতন করে, অপদিকে ছালাম সেখের সাথে বহিরাগত চরমপন্থি সর্বহারা সদস্যদের সাথে সম্পর্ক রয়েছে। সেই চরমপন্থিদের দ্বারা গোপনে হুমকী-ধামকির মাধ্যমে স্থানীয়দের মাঝে ভয়-ভিতিকর পরিস্থিতিসহ আতঙ্ক সৃষ্টি করে। ভয়ে আর কেউ জমির ধারের কাছে না যাওয়ায় ভিপি জমিতেও ঘর নির্মান করে। সেই থেকে জমিটি হানিফ সেখ গংদের দখলে চলে যায়। শুধু তাই নয়, জবর-দখলের পর ওই “ভিপি” জমির মালিক বনে যাওয়ার উদেদেশ্যে এবার জাল দলিল তৈরি করেছে দঙ্গাবাজ-দখলবাজ ও প্রতারক মো. হানিফ সেখ গং।

এ ছাড়াও, গত ২৩/০৩/২০২২ তারিখ বেলা ১১.টার দিকে আলীপুর ইউপি পরিষদ কতৃক জমি মাপ-ঝোখের এক বৈঠকে হানিফ সেখের জমির কাগজপত্র দেখতে চাইলে হানিফের ছেলে মুন্নাফ একটি পুরনো দলিল উপস্থাপিত করে। ওই বৈঠকে ইউপি সদস্য, ভূমি অফিসার, সাংবাদিক ও সার্ভেয়ারসহ একাধিক লোকজন উপস্থিত ছিলেন। উপস্থাপিত দলিলটি দেখে পরিলক্ষিত হয় যে, পাকিস্তান আমলের চাঁদ-তারা প্রতিকের (ছয় রূপি) ৬ টাকা মূল্যের পুরাতন দলিল ফটোকপি করে তাতে নতুন কলম কালির লেখা এবং ২৪-১২-১৯৬৯ ইং তারিখে দলিলে রেজিষ্ট্রির কথা লেখা রয়েছে। এছাড়াও সই, সীল, কাগজ ইত্যাদিতে অসংলগ্ন ও অমিল রয়েছে। উদ্দেশ্য প্রনিতভাবে বহু পুরাতন তারিখ ব্যবহার করা হয়েছে, যার কারনে দলিলটি ভূয়া ও জাল বলে নিশ্চিত হয়েছেন প্রত্যাক্ষদর্শীরা।
উল্লেখ্য, মো. হানিফ সেখের বাড়ি ছিল গোদারবাজার চর এলাকায়, সেখান থেকে স্বপরিবার এসে ইন্দ্রনারায়ণপুরে বাড়ি করেছে ১২/১৩ বছর। আর সে ৪৩৬ নং দাগের ভিপি সম্পত্তি খরিদ দাবি করে দলিল দেখাচ্ছে ৬৩ বছর পূর্বের। এ বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়জোনিয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য জেলা প্রশাসনের ভূমিসংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ ও হস্তক্ষেপ কামনা করেন মাপজোখে থাকা উপস্থিতিরা।
দলিল প্রত্যাক্ষদর্শীদের ধারনা, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন পাকিস্তান হানাদার বাহিনী কতৃক অগ্নিসংযোগে বিভিন্ন অফিসের রেজিষ্ট্রি বহি ও দলিলপত্র ভস্মিভূত হয়েছিল। সে আগুনে মোঃ হানিফ সেখের নামীয় ওই ২৪ শতাংশ জমির দলিলের তথ্য-প্রমান লেখা রেজিষ্ট্রি বহিও পুড়ে গেছে, এটা বলার ও প্রমানের উদ্দেশ্যে-ই ওই জাল দলিলের তারিখটা বেছে বেছে ১৯৬৯ সাল ব্যবহার করা হয়েছে বলে উপস্থিত সকলে মনে করছেন।
ওই জাল দলিলের বিষয়ে- আলীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে তহশীলদারের কাছে জানতে চাইলে, তিনি রেজিস্টার বহি দেখে জানান যে, ইন্দ্রনারায়নপুর মৌজার জেএল নং- ১৫৮, ১/১ নং খতিয়ানে বিএস ৪৩৬ নং দাগের ‘খ’ তপশীলভূক্ত ২৪ শতাংশ নাল জমি রহিয়াছে। সিএস, এসএ ও আরএস রেকর্ডে- ১. ভূবন মহিনী, জং- করুনা সিন্ধু। ২. শরৎ চন্দ্র, পিতা- শিব চন্দ্র। ৩. বিমল চন্দ্র পিতা- সুখেন্দ্র। ৪. অন্নদা চরণ প্রমোদা পিং- আধিকা । এই ৪ জনের নাম রহিয়াছে। এই সম্পতির মালিকগণদের না থাকায় পরবর্তীতে বাংলাদেশ গণপ্রজাতন্ত্রী সরকারের নামে বিএস রেকর্ড হয়েছে।অর্থাৎ ১/১ নং খতিয়ানের অন্তর্ভূক্ত হয়েছে।
প্রতিবেদকের মন্তব্য- জালিয়াতির মাধ্যমে ১৯৬৯ সাল উল্লেখ করে পুরোনো দলিল তৈরী করে ৪৩৬ নং দাগের ২৪ শতাংশ ভূমি দাবি করলেও তার নামে ভূমি অফিসে রক্ষিত বালামে কোনো রেকর্ড পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, দঙ্গাহাঙ্গামাপ্রিয়-ভূমিদখলবাজ ও প্রতারক মো. হানিফ সেখ গং কতৃক এখন পর্যন্ত বিভিন্ন লোকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করে হয়রানি ও চরমপন্থি দ্বারা নির্যাতন করে আসছেন। চলমান হয়রানি ও নির্যাতন থেকে রেহাই পেতে স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি দৃষ্টিআকর্ষন ও হস্তক্ষেপ কামনা করেন নির্যাতিত ব্যক্তিরা।