Thursday, July 25, 2024

শরিফুলের বোলিং নৈপুন্যে আফগানিস্তানের কাছে হোয়াইটওয়াশ এড়ালো বাংলাদেশ

চট্টগ্রাম : বাঁ-হাতি পেসার শরিফুল ইসলামের বোলিং নৈপুন্যে আফগানিস্তানের কাছে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়াতে পেরেছে বাংলাদেশ।

আজ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ৭ উইকেটে হারিয়েছে আফগানিস্তানকে। শরিফুলের বোলিং তোপে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ৪৫ দশমিক ২ ওভারে ১২৬ রানে অলআউট হয় আফগানিস্তান। ৯ ওভারে ২১ রানে ৪ উইকেট নেন ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া শরিফুল।

জবাবে অধিনায়ক লিটন দাসের হাফ-সেঞ্চুরিতে ১৫৯ বল বাকী রেখেই জয়ের স্বাদ নিয়ে হোয়াইটওয়াশ এড়ায় বাংলাদেশ। লিটন ৫৩ রানে অপরাজিত থাকেন। বৃষ্টি আইনে প্রথম ওয়ানডে ১৭ রানে ও দ্বিতীয় ম্যাচ ১৪২ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছিলো বাংলাদেশ। এতে ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ। এই প্রথম আফগানিস্তানের কাছে ওয়ানডে সিরিজ হারলো বাংলাদেশ।
তিনটি পরির্বতন নিয়ে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে টস হেরে প্রথমে বোলিংয়ে নামে বাংলাদেশ। তিন পেসার এবাদত হোসেন, হাসান মাহমুদ ও মুস্তাফিজুর রহমানের জায়গায় একাদশে সুযোগ হয় দুই পেসার তাসকিন-শরিফুল ও স্পিনার তাইজুলের।
তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন শরিফুল। উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমকে ক্যাচ দিয়ে ১ রানে বিদায় দেন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ইব্রাহিম জাদরান। আগের ম্যাচে ১০০ করা ইব্রাহিম আজ ১ রান করে আউট হন।
একই ওভারের পঞ্চম বলে রহমতশাহকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে আবারও উইকেট শিকারের আনন্দে মাতান শরিফুল। মুশফিককে ক্যাচ দেওয়া রহমতশাহ রানের খাতাই খুলতে পারেননি।
শরিফুলের জোড়া আঘাতের পর প্রথম উইকেটের দেখা পান তাসকিন। নিজের তৃতীয় ওভারে আগের ম্যাচের আরেক সেঞ্চুরিয়ান রহমানউল্লাহ গুরবাজকে ৬ রানে থামিয়ে দেন তাসকিন। এবারও উইকেটের পেছনে ক্যাচ নেন মুশফিক। আগের ম্যাচে ১৪৫ রান করেছিলেন গুরবাজ।
ইনিংসের পঞ্চম ওভারে আবারও সাফল্য পান শরিফুল। রাউন্ড দ্য উইকেটে বোলিং করে মোহাম্মদ নবিকে লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন শরিফুল। বাংলাদেশের আবেদনে সাড়া দিয়ে নবিকে আউট ঘোষনা করেন নন-স্ট্রাইকের আম্পায়ার। রিভিউ নিয়েও উইকেটে টিকতে পারেননি মাত্র ১ রান করা নবি।
শরিফুলের আগুন বোলিংয়ে ৯ ওভার শেষে ১৫ রান তুলতেই ৪ উইকেটে পরিনত হয় আফগানিস্তান। । এটিই সবচেয়ে কম রানে ৪ উইকেট হারানোর লজ্জা আফগানদের। এর আগে ২০১৮ সালে বেলফাষ্টে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়েছিলো তারা।
চাপে পড়া আফগানিস্তানকে চাপমুক্ত করার চেষ্টা করেন অধিনায়ক হামতউল্লাহ শাহিদি ও নাজিবুল্লাহ জাদরান। সাবধানে খেলতে থাকেন তারা। কিন্তু এই জুটিকে বেশি দূর যেতে দেননি সাকিব আল হাসান। ১৬তম ওভারে নাজিবুল্লাহকে লেগ বিফোর ফাঁেদ ফেলেন সাকিব। আম্পায়ার আউট দেয়ার পর রিভিউ নিয়েও উইকেট বাঁচাতে পারেননি নাজিবুল্লাহ। ১০ রানে নাজিবুল্লাহ আউট হলে ভেঙ্গে যায় ৪৫ বলে ১৭ রানের জুটি ।
এরপর আজমতুল্লাহ ওমারজাইকে নিয়ে জুটির চেষ্টা করেন শাহিদি। কিন্তু ২২তম ওভারে তাইজুলের বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন শাহিদি। আউট হওয়ার আগে ৪টি চারে ৫৪ বলে ২২ রান করেন তিনি।
প্রথম স্পেলে ৫ ওভারে ৮ রানে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন শরিফুল। ২৩তম ওভারে দ্বিতীয় স্পেলে বল হাতে নেন তিনি। নিজের অষ্টম ওভারে অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা আব্দুল রহমানকে ৪ রানে থামিয়ে চতুর্থ উইকেট নেন শরিফুল। ৬৮ রানে সপ্তম উইকেট হারিয়ে ১শর নীচে গুটিয়ে যাবার শংকায় পড়ে আফগানরা।
কিন্তু লোয়ার-অর্ডার ব্যাটার নিয়ে লড়াই করেন আজতুল্লাহ ওমারজাই। অষ্টম উইকেটে অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা আরেক ক্রিকেটার জিয়া-উর-রহমানের ৫৩ বলে ২১ রান যোগ করেন ওমারজাই। ৫ রান করা জিয়াউরকে তাইজুল বোল্ড আউট করলে ভেঙ্গে যায় জুটি।
নবম উইকেটে মুজিব উর রহমানকে নিয়ে এই ইনিংসে সর্বোচ্চ ৩৬ রানের জুটি গড়ে আফগানিস্তানের রান ১শ পার করেন ওমারজাই। জুটি গড়তে গিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন ওমারজাই। ৪৫তম ওভারে মুজিব ও ওমারজাই জুটি ভাঙ্গেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ১১ রান করে মিরাজের শিকার হন মুজিব।
৪৬তম ওভারে শেষ ব্যাটার হিসেবে ওমারজাইকে থামিয়ে আফগানিস্তানের ইনিংসের ইতি টানেন তাসকিন। ১টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৭১ বলে ৫৬ রান করেন ওমারজাই। ৪৫ দশমিক ২ ওভারে ১২৬ রানে শেষ হয় আফগানিস্তানের ইনিংস। সব উইকেট হারানো ইনিংসে বাংলাদেশের বিপক্ষে এটিই সর্বনি¤œ রান আফগানদের।
ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করে ৯ ওভারে ২১ রানে ৪ উইকেট নেন শরিফুল। এছাড়া তাসকিন-তাইজুল ২টি করে এবং মিরাজ-সাকিব ১টি করে উইকেট নেন।
হোয়াইটওয়াশ এড়াতে ১২৭ রানের সহজ টার্গেটে তৃতীয় ওভারেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আফগানিস্তান পেসার ফজলহক ফারুকির বলে ব্যাটের কানায় লেগে বোল্ড হন মোহাম্মদ নাইম। ৮ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি।
তিন নম্বরে নেমে ২টি চারে পথচলা শুরু করেন আগের দুই ম্যাচে ব্যাট হাতে সুবিধা করতে না পারা নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু এবারও বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হন তিনি। ১১ রান করে ফারুকির বলে বোল্ড হন তিনি। প্রথম দুই ম্যাচে ১২ ও ১ রান করেন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে গত সিরিজে তিন ম্যাচে ১৯৬ রান করা শান্ত। ২৮ রানে ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এ অবস্থায় অধিনায়ক লিটন দাসের সাথে জুটি বাঁধেন সাকিব। দ্রুত রান তুলে অষ্টম ওভারেই দলের স্কোর ৫০ পার করেন তারা। ১৭ ওভার শেষে দলের রান ৮৯তে নেন লিটন-সাকিব।
কিন্তু ১৮তম ওভারের প্রথম বলে লিটন-সাকিব জুটি ভাঙ্গেন নবি। ৫টি চারে ৩৯ বলে ৩৯ রান করে নবির শিকার হন সাকিব। তৃতীয় উইকেটে ৬১ বলে ৬১ রান যোগ করেন লিটন-সাকিব জুটি।
সাকিব যখন ফিরেন তখন জয় থেকে ৩৮ রান দূরে বাংলাদেশ। তাওহিদ হৃদয়কে নিয়ে ৩৮ বলে অবিচ্ছিন্ন ৪০ রানের জুটি গড়ে ২৪তম ওভারের তৃতীয় বলে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন লিটন। ৫৭ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৭তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন। শেষ পর্যন্ত ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬০ বলে ৫৩ রানে অপরাজিত থাকেন লিটন। ১৯ বলে ২২ রানে অপরাজিত থাকেন হৃদয়। আফগানিস্তানের ফারুকি ২টি ও নবি ১টি উইকেট নেন।
আগামী ১৪ জুুলাই থেকে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দুই ম্যাচের টি-টুয়েন্টি সিরিজ খেলতে নামবে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান।

স্কোর কার্ড :
আফগানিস্তান ইনিংস :
গুরবাজ ক মুশফিকুর ব তাসকিন ৬
ইব্রাহিম ক মুশফিকুর ব শরিফুল ১
রহমত ক মুশফিকুর ব শরিফুল ০
শাহিদি বোল্ড ব তাইজুল ২২
মোহাম্মদ নবি এলবিডব্লু ব শরিফুল ১
নাজিবুল্লাহ এলবিডব্লু ব সাকিব ১০
ওমারজাই ক নাইম ব তাসকিন ৫৬
আব্দুল রহমান ক তাইজুল ব শরিফুল ৪
জিয়া উর রেহমান বোল্ড তাইজুল ৫
মুজিব ক আফিফ ব মিরাজ ১১
ফারুকি অপরাজিত ০
অতিরিক্ত (লে বা-১, ও-৯) ১০
মোট (অলআউট, ৪৫.২ ওভার) ১২৬
উইকেট পতন : ১/৩ (ইব্রাহিম), ২/৩ (রহমত), ৩/১৪ (গুরবাজ), ৪/১৫ (নবি), ৫/৩২ (নাজিবুল্লাহ), ৬/৫৩ (শাহিদি), ৭/৬৮ (আব্দুল), ৮/৮৯ (জিয়া), ৯/১২৫ (মুজিব), ১০/১২৬ (ওমারজাই)।
বাংলাদেশ বোলিং :
শরিফুল : ৯-১-২১-৪ (ও-২),
তাসকিন : ৮.২-১-২৩-২ (ও-২),
মিরাজ : ৯-১-৩৫-১,
সাকিব : ১০-১-১৩-১,
তাইজুল : ৯-০-৩৩-২ (ও-১)।
বাংলাদেশ ইনিংস :
মোহাম্মদ নাইম বোল্ড ফারুকি ০
লিটন দাস অপরাজিত ৫৩
নাজমুল হোসেন বোল্ড ব ফারুকি ১১
সাকিব ক শাহিদি ব নবি ৩৯
তাওহিদ হৃদয় অপরাজিত ২২
অতিরিক্ত (লে বা-২, ও-২) ৪
মোট (৩ উইকেট, ২৩.৩ ওভার) ১২৯
উইকেট পতন : ১/২ (নাইম), ২/২৮ (শান্ত), ৩/৮৯ (সাকিব)।
আফগানিস্তান বোলিং :
ফারুকি : ৫-১-২৬-২,
মুজিব : ৭-১-৩৪-০ (ও-২),
জিয়া : ৩.৩-০-২২-০,
ওমারজাই : ২-০-১১-০,
আব্দুল : ৪-০-২৭-০,
নবি : ২-০-৭-১।
ফল : বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: শরিফুল ইসলাম(বাংলাদেশ)।
সিরিজ সেরা ফজলহক ফারুকি(আফগানিস্তান)।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জিতলো আফগানিস্তান।

 

সূত্রঃ ১১ জুলাই ২০২৩ (বাসস)

সর্বশেষ পোষ্ট

এই ধরনের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here